চট্টগ্রামে ব্যাংক লুটের চেষ্টায় সন্দেহে ভবনের বাসিন্দারাই

চট্টগ্রাম নগরীতে বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টায় ওই ভবনেরই দুই বাসিন্দাকে সন্দেহ করছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2020, 12:49 PM
Updated : 9 Feb 2020, 12:54 PM

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চোরের দল আগেই ওই ভবনে অবস্থান নিয়েছিল এবং আগে পরিকল্পনা করে সেই অনুযায়ী তারা ব্যাংকে ঢুকে ভল্ট ভাঙার চেষ্টা করে।

শনিবার দুপুরে ইউসিবির নগরীর কদমতলী শাখায় নিরাপত্তাকর্মীকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়, ব্যাংকের গেইটের তিনটি তালা কেটে সেখানে নতুন একটি তালা লাগানো হয়েছিল।

এই অবস্থা দেখে পুলিশ ডেকে ভেতরে ঢোকেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। সেখানে ভল্ট ভাঙার চেষ্টা হওয়ার প্রমাণ দেখতে পান তারা। পরে ঢাকা থেকে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা গিয়ে মধ্যরাতে টাকা গুণে দেখেছেন তাতে কোনো হেরফের হয়নি।

ব্যাংক লুটের এই চেষ্টায় পাঁচতলা ওই ভবনের পঞ্চম তলায় ঘর ভাড়া নেওয়া কয়েক যুবককে সন্দেহ করা হচ্ছে বলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম জোন) ফারুকুল হক জানিয়েছেন।

তিনি রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কয়েকজন যুবক এনজিওর অফিস করবেন বলে জিলানী মার্কেট নামে পরিচিত এই ব্যাংক ভবনের পঞ্চম তলায় একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন অফিস পরিষ্কারের কথা বলে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে অবস্থান করা শুরু করেছিলেন।

“ভল্ট চুরির চেষ্টার পর থেকে তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ভবনের দ্বিতীয় তলায় ব্যাংকটির অবস্থান হলেও নৈশ প্রহরীকে পাওয়া গেছে পঞ্চম তলায়। তাই সন্দেহের দিকটি তাদের দিকেই।”

ভল্টের টাকা খোয়া যায়নি বলে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক বলেন, “চোরের দল যেভাবে ভল্টের অ্যালার্ম খুলে ফেলার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ডিভিআরের হার্ড ডিস্ক নিয়ে গেছে, তাতে পরিস্কার হয়েছে যারাই চেষ্টা করুক তারা পূর্ব পরিকল্পনা করে সেটা করেছে।”

ব্যাংকের টাকা চুরি না হলেও যারাই এই চেষ্টা করেছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

চোরের দল ব্যাংকে প্রবেশের পর সেখানকার ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল।

এর আগে ২০১৫ সালের ৭ মে নগরীর পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুরে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের প্রহরীকে গলা কেটে হত্যা করে টাকা চুরির চেষ্টা হয়েছিল।

শনিবারের এই ঘটনায় নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ইউসিবির কদমতলী শাখার ব্যবস্থাপক টুংকু হুমায়ুন মো. রাশেদ।

ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রহরীকে বিষ প্রয়োগ করে চুরির জন্য রাতের বেলা অফিসে প্রবেশের ঘটনায় মামলাটি করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩২৮, ৪৫৭, ৩৮০ ও ৩৪ ধারায় এই মামলা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়, ব্যাংকের ভল্টের চাবি দিয়ে তা খোলার চেষ্টা করা হলেও খুলতে পারেনি চোরের দল। ভল্টে রাখা দুই কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা অক্ষত আছে। তবে ভল্টের নিরাপত্তা অ্যালার্ম খুলে ফেলার পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার ডিভিআরের হার্ড ডিস্ক খোয়া গেছে।  

ব্যাংক কর্মকর্তা রাশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নগরীর ধনিয়ালাপাড়া ডিটি রোডের জিলানী মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ইউসিবির কদমতলী শাখাটিতে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষীরা নিয়োজিত ছিলেন। 

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা অফিস বন্ধ করে গেলেও শুক্রবার নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে তদারক করে গিয়েছিলেন তাদের দায়িত্বরত কর্মকর্তা। শনিবার দুপুরে বদলি শিফটে আসা প্রহরী মো. আরমান তাদের সহকারী ব্যবস্থাপককে ফোনে জানান, ব্যাংকের গেইটে লাগানো তিনটি তালা কেটে অন্য একটি তালা লাগানো হয়েছে। দায়িত্বরত নৈশ প্রহরী নওশাদকে অজ্ঞান অবস্থায় ভবনের পঞ্চম তলায় পাওয়া গেছে।

ঢাকা থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষিত দল এসে ভল্ট খুলে সেখানে রাখা দুই কোটি ৫১ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা ঠিক আছে বলে তাদের জানিয়েছে।