গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী সরোয়ারের বাড়িতে মিললো একে-২২

মধ্যপ্রাচ্যে বসে চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি চালিয়ে আসা পলাতক সন্ত্রাসী সরোয়ার ওরফে বাবলা দেশে ফিরে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বাসায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2020, 06:38 AM
Updated : 9 Feb 2020, 07:25 AM

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার জানান, শনিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ সরোয়ারকে আটক করে। পরে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা পুলিশ সরোয়ারের পরিচয় নিশ্চিত করে রোববার তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে।

এরপর রোববার ভোরে চট্টগ্রামের খন্দকীয়া পাড়ায় সরোয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৩০ রাউন্ড গুলিসহ একটি একে-২২ রাইফেল, চার রাউন্ড গুলিসহ একটি এলজি উদ্ধার করা হয় বলে বায়েজিদ থানার ওসি প্রিটন সরকার জানান। 

তিনি বলেন, “পরিচয় নিশ্চিত করে সরোয়ারকে চট্টগ্রামে এনেই তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে।” 

সহকারী কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদার বলেন, “প্রায় তিন বছর কাতারে পালিয়ে ছিলেন সরোয়ার। সেখানে মারামারির এক ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করে এক মাসের সাজা দেয়। সাজা শেষে সরোয়ারকে তারা দেশে পাঠিয়ে দিলে ঢাকা বিমানবন্দরে পুলিশ তাকে আটক করে।”

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করা সরোয়ারের নাম চট্টগ্রাম পুলিশের করা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ তালিকাতেও রয়েছে। চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে সরোয়ারের বিরুদ্ধে।

বিকালে তাকে আদালতে তোলা হবে জানিয়ে ওসি প্রিটন সরকার বলেন, “দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।”

চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে প্রায় দেড় দশক আগে আলোচনায় আসে সরোয়ার ও তার বন্ধু ম্যাক্সনের নাম। সে সময় তারা পরিচিত ছিলেন শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে, যিনি চট্টগ্রামের আট খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি।

২০১১ সালের জুলাই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ম্যাক্সন। তার দেওয়া তথ্যে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সরোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের কাছ থেকে সে সময় উদ্ধার করা হয় একটি একে-৪৭ রাইফেল, দুটি পিস্তল, একটি এলজি, একে-৪৭ রাইফেলের দুটি ম্যাগজিন এবং গুলি।

এর মধ্যে সাজ্জাদের সঙ্গে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের সম্পর্কের অবনতি হয়। কারাগারে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন চৌধুরীরর সঙ্গে।

এ কারণে ২০১৩ সালে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে সরোয়ার ও ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও সরোয়ার ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের হয়ে ‘মাঠের তদারকি’ করতেন ইমতিয়াজ সুলতান ওরফে একরাম।

এই একরামের পুরো নাম ইমতিয়াজ সুলতান একরাম। তিনি চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যা মামলার পলাতক আসামি। এলাকায় তিনি পরিচয় দিতেন যুবলীগ নেতা হিসেবে।

পরিদর্শক প্রিটন সরকার জানান, ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে গিয়েছিলেন সরোয়ার ও ম্যাক্সন। আর তাসফিয়া হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর একরামও কাতারে পাড়ি জমান।

গতবছর ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে গাড়ির যন্ত্রাংশের ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে সরোয়ার, ম্যাক্সনের নামে চাঁদা দাবি করে তাদের সহযোগী কয়েকজন যুবক। তাদের কথামত চাঁদা না দেওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর নয়া হাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়।

এরপর উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে আরেক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই কায়দায় টাকা দাবি করা হয় ভারতের কারগারে বন্দি সাজ্জাদের নাম দিয়ে।

এ বিষয়ে তদন্তে নেমে গত বছরের ২৪ অক্টোবর রাতে পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই মধ্যপ্রাচ্যে বসে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের দেশে চাঁদাবাজির বিষয়ে নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তারা।