চট্টগ্রামের একুশে বইমেলা আরও বড় পরিসরে

গতবারের তুলনায় আরও বড় পরিসরে আয়োজিত এবার চট্টগ্রামের একুশে বইমেলা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2020, 03:01 PM
Updated : 8 Feb 2020, 03:23 PM

শনিবার বিকালে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম সংলগ্ন বইমেলার মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, এবার এক লাখ ২০ হাজার তিনশ বর্গফুট এলাকায় মোট ২০৫টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ১১৮টি এবং চট্টগ্রামের ৪০টি প্রকাশনার স্টল থাকবে।

গতবছর মেলার স্টল ছিল ১১০টি, যার মধ্যে ঢাকার প্রকাশকদের স্টল ছিল ৫০টি।

আগামী সোমবার বিকালে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মেলা চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের বই মেলা জাতির পিতাকে নিবেদন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

মেয়র নাছির গত বছর থেকে সিটি করপোরেশনের আয়োজনে এই সম্মিলিত বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করে চট্গ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র নাছির জানান, এবারই বই মেলার জন্য প্রথমবারের মতো নীতিমালা করা হয়েছে, যেখানে একুশে বই মেলায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এবং জননিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর’ কোনো বই বিক্রি করা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নীতিমালার ৩৩তম ধারায় বলা হয়েছে- ‘অশ্লীল, রুচিগর্হিত, জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি কটাক্ষমূলক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য যে কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা কোনো পত্রিকা বা অন্য কোনো দ্রব্য মেলায় বিক্রি, প্রচার ও প্রদর্শন করা যাবে না’।

পাশাপাশি বইমেলা পরিচালনা কমিটি ‘বিশেষ কারণে বা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে’ কোনো বই, ম্যাগাজিন, লিফলেট প্রচার, প্রদর্শন বা বিক্রি ‘বাঞ্চনীয়’ মনে না করলে অংশগ্রহণকারীরা তা প্রচার, প্রদর্শন বা বিক্রি করতে পারবে না বলেও নীতিমালার ওই ধারায় উল্লেখ করা হয়।

‘অশ্লীল ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়’ এমন বই কিভাবে চিহ্নিত হবে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে মেলা পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব ও সিসিসির প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একজনসহ মেলা পরিষদের কয়েকজনকে নিয়ে একটি কমিটি করা হবে।

“তারা নিয়মিত মনিটর করবেন। কোনো অভিযোগ এলে সেটাও তারা দেখবেন। এরপর কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে।”

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির মেলার জন্য প্রথমবারের মত নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলে তা অনুসরণের আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “মেলায় স্বাধীনতাবিরোধী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, দেশবিরোধী এবং জঙ্গিবাদকে উদ্বুদ্ধ করে এরকম বই কেউ বিক্রি করতে পারবে না। সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এবারের মেলায় অন্বেষা, সন্দেশ, ইত্যাদি, চারুলিপি, তাম্রলিপি, আহমদ, অনুপম, এডর্ন, নালন্দা, ইউপিএল, প্রথমা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, অন্য প্রকাশ, আগামী, গ্রন্থকুটির, রোদেলা, সময়, বলাকা, বাতিঘর, পাঞ্জেরিসহ বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা অংশ নেবে বলে জানান মেয়র।

সংবাদ সম্মেলনে মেলা পরিষদের আহ্বায়ক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, সৃজনশীল প্রকাশ পরিষদের সভাপতি ও মেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, যুগ্ম সচিব গবেষক জামাল উদ্দিনসহ প্রকাশকরা উপস্থিত ছিলেন।

তিন দিনের লেখক সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের লেখকরাও যোগ দেবেন বলে জানান মেলা পরিষদের সদস্য সচিব।

এবার মেলা উপলক্ষ্যে সঙ্গীতানুষ্ঠান, রবীন্দ্র ও নজরুল উৎসব, বসন্ত বরণ উৎসব, কবিতা ও ছড়া উৎসব, তারুণ্য উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, বির্তক উৎসব, শিশু উৎসব, লেখক সম্মেলন ও পাঠক সমাবেশের আয়োজন করা হবে।

এছাড়া সাহিত্য আড্ডা, সাহিত্য-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ, চিত্রাংক, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, লোক ও মরমী সংগীত, নাটক মঞ্চায়ন, জাদু প্রদর্শন ও নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।

মেলা প্রাঙ্গনে আয়োজক পরিষদের কক্ষ, হেলথ বুথ, ফায়ার সাভির্স, অর্ভ্যথনা কক্ষ, মিডিয়া বুথ, বিটিবি বুথ, এটিএম ব্যাংকের বুথ, সার্বক্ষণিক সেবা ব্যবস্থার জন্য সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস বুথ থাকবে।

মেলা প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে।