বৃহস্পতিবার বিকেলে লালদীঘি মাঠে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, যৌতুক ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম।
এরপর মঞ্চ থেকে সঞ্চালক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী অন্য কয়েকজনের সাথে সমাবেশে উপস্থিত হিসেবে মাসুমের নামও ঘোষণা করেন।
কিছুক্ষণ পর সভা মঞ্চের সামনে দর্শকদের প্রথম সারিতে মাঝামাঝি স্থানে বসেন মাসুম। সমাবেশের শেষ দিকে সেখান থেকে সরে গিয়ে একপাশে গিয়ে বসেন তিনি।
এরপর গত ৪ অগাস্ট ঢাকা থেকে মাসুমকে গ্রেপ্তার পিবিআই। গত ১৫ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ছাড়া পান মাসুম। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে জামিন আদেশ বাতিল করে আদালত। ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৯ জানুয়ারি আবার জামিনে মুক্ত হন মাসুম।
এরমধ্যে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ কবির মানিক গত বছরের ২২ জুলাই দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
৩১ জুলাই মাসুমের দুটি অস্ত্রের নিবন্ধন বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৩ অগাস্ট বিকালে মাসুম নিজে গিয়ে অস্ত্রগুলো খুলশী থানায় জমা দেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিটি করপোরেশনের আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র নাছির বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে সকল ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি ও যৌতুক থেকে রক্ষা করতে হবে।
“সেজন্য সিটি করপোরেশনের জনগণের প্রতি যে দায়বদ্ধতা-অঙ্গীকার আছে ৪১টি ওয়ার্ডের দলমত নির্বিশেষে জনগণকে সংগঠিত করে সমাবেশ করছি।”
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত যে বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে আমিও চট্টগ্রাম মহানগরকে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।”
এরপর সমাবেশে উপস্থিতদের শপথ বাক্য পাঠ করান মেয়র।
“সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলব। সকল অপরাধ বিষয়ক সংবাদ প্রথমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে ভালোবাসব।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মোবারক আলী, মোরশেদ আখতার, এফ কবির আহমেদ মানিক, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, জহর লাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, গিয়াস উদ্দিন, নেছার উদ্দিন মঞ্জু, সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু ও সলিমুল্লাহ বাচ্চু প্রমুখ।
এছাড়াও কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু, তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের, মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, জিয়াউল হক সুমন ও গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের উপস্থিত ছিলেন।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া:
অন্যদিকে সমাবেশ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেরশাহ এলাকার দুটি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সেখানে গিয়ে কাউকে পাইনি। অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি।”
সমাবেশ চলাকালে লালদীঘি মাঠ সংলগ্ন সড়কেও দুটি পক্ষের মধ্যে লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া হয়। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
লালদীঘি মাঠে সমাবেশের জন্য মাঠের আশপাশের কয়েকটি স্থানে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাসে করে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা এখানে আসেন। সমাবেশ শেষে সপ্তাহের শেষ দিন শেষ বিকেলে নগরীর বিভিন্ন অংশে যানজট সৃষ্টি হয়।