মঙ্গলবার বিকালে নগরীর ওয়াইজ পাড়া এলাকায় নিজে স্কেভেটর চালিয়ে মাটি তুলে খাল খনন কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
উদ্বোধন হলেও পাঁচটি লটে ভাগ করা প্রকল্পটির তিনটি লটে এখনও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় ঠিকাদারই নিয়োগ হয়নি।
এবারও নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে খালটি খননের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন খোদ মেয়র।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নাছির বলেন, “এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে যে জমির দাম আগে মৌজা দরের দেড় গুণ ছিল, এখন তা তিন গুণ। এজন্য প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। যে জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন সেটা এ টাকায় সম্ভব না। এখন প্রকল্প ব্যয় উন্নীত হয়েছে ১২৫৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকায়।”
১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) করা ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত দুই দশমিক নয় কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি খননের সুপারিশ করা হয়।
কিন্তু সরকারি অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকায় প্রথম মেয়াদে প্রকল্পের কোনো কাজই করতে পারেনি সিসিসি।
এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর একনেকে প্রকল্পটি পুনঃবিবেচনা করে আবারও অনুমোদন করা হয়। মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
সিটি মেয়র নাছির বলেন, “মাস্টার প্ল্যানে এটি ছিল। প্রথম দফায় না হওয়ার পর আমরা সার্ভে করেছিলাম আদৌ এ প্রকল্প প্রয়োজন কিনা। একেক জনের মত একেক রকম।
“প্রয়োজন নিয়ে আমরা দ্বিধায় ছিলাম। মন্ত্রণালয়ে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিই- প্রয়োজন আছে। এ এরপর প্রকল্প রিভাইস করা হলো। ১২৫৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।”
এই খাল খননে প্রায় ২৫ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে যাতে খরচ হবে মোট এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
সিটি মেয়র নাছির বলেন, পুরো অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসনকে দিতে হয়। আবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও নিতে হয়। যাতে এটি বাস্তবায়ন করা যায় এজন্য প্রকল্পকে পাঁচটি লটে ভাগ করা হয়েছে। এর দুটিতে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে।
জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে জেলা প্রশাসনকে টাকা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র নাছির বলেন, “এ পর্যন্ত ৮৫১ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।
“জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছি, যত দ্রুত সম্ভব জমির মালিকরা যেন ক্ষতিপূরণ পেয়ে যান। উনাকে বলেছি আপনি আইন মানুন, তবে জমির মালিকরা যেন ভোগান্তিতে না পড়েন। এলাকার সবাই আমাদের সহযোগিতা করছেন। তাদের বলেছি আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। টাকা পেয়ে যাবেন।”
২.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি হবে ৬৫ ফুট চওড়া। খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে দুটি রাস্তা হবে এবং ছয় ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে।
তবে এই মেয়াদেও প্রকল্পের শেষ হওয়ার আশা জাগাতে পারেননি মেয়র। মঙ্গলবার তিনি বলেন, প্রথম দুই লটে কাজ শেষ করতে চার মাস করে লাগবে। পরের তিন লট অনুমোদনের জন্য ভূমিমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি। সব মিলিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
দুই লটের মোট ১০ একর জমি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পেয়েছে সিটি করপোরেশন।
নগরীর নাসিরাবাদ, শুলকবহর, বহদ্দারহাট, বারইপাড়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া ও চাক্তাই এলাকার প্রায় ১০ লাখ মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ২০১২ সালের নভেম্বরে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল সিসিসি।
বারইপাড়া হাইজ্জারপুল থেকে শুরু হয়ে খালটি যাবে নূর নগর হাউজিং, ওয়াইজের পাড়া, বলিরহাটের বলি মসজিদের উত্তর পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিশবে।
মেয়র নাছির জানান, খাল খনন শেষ হলে পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ শুলকবহর, চান্দগাঁও, মোহরা এব্ং পূর্ব ও পশ্চিম ষোলশহর এবং সংলগ্ন এলাকাসহ মোট আটটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।