বস্তির আগুনে পুড়েছে গরিবের বহু কষ্টের ধন

চট্টগ্রামের শুলকবহর এলাকার বস্তিতে আগুনে ঘর তো পুড়েছেই, সেই সঙ্গে ছাই হয়েছে কারও মেয়ের বিয়ের জন্য গচ্ছিত টাকা, আবার কেউ হারিয়েছে নতুন ঘর তৈরির স্বপ্ন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2020, 06:23 PM
Updated : 24 Jan 2020, 06:48 PM

ঘটনাস্থলে গিয়ে চোখে পড়ে ঘর পোড়া মানুষের আহাজারি। ঘরের সাথে আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের শেষ সম্বলটুকুও। ঘর পোড়া মানুষগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ারও কেউ নেই। সব হারিয়ে নিঃস্ব সবাই।

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার শুলকবহরের পুরাতন ওয়াপদা সংলগ্ন ডেন্টাল মেডিকেলের পাশে ডেকোরেশন গলির বাবু কলোনিতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কলোনিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে তা ভাড়া দিয়েছিলেন অনেকেই, যেখানে বসত ছিল নিম্ন আয়ের শতাধিক পরিবারের।

আবু কলোনির রফিক সাওদাগরের ভাড়াটিয়া সাহেরা বেগম। তিন ছেলে, তিন মেয়ে, ছেলের বৌ আর স্বামীকে নিয়ে নয়জনের সংসার তার। নিজেরা বাঁচতে পারলেও আগুনের লেলিহান শিখা থেকে ঘরের কিছুই রক্ষা করতে পারেননি।

সাহেরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকালে বাসার পেছন দিক থেকে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হলে তারা কয়েকজন প্রতিবেশী কেউ মারামারি করছিল মনে করে থামাতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে ধোঁয়া দেখে বুঝতে পারেন তাদের কলোনিতে আগুন লেগেছে। কিন্তু বাসায় ফেরার আগেই তার বসত ঘরটিতেও আগুন লেগে যায়।

চোখের সামনে ঘর পুড়ে ছাই হতে দেখা সাহেরা বলেন, “আগামী ২ ফেব্রুয়ারি আমার বড় মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করেছিলাম। বিয়ের কেনাকাটার জন্য প্রতি মাসে হাজারে ২০০ টাকা সুদে ৩০ হাজার টাকা এনে বাসায় রেখেছিলাম তিন দিন আগে। পাশাপাশি মেয়ের জন্য দুই জোড়া কানের দুল ও ২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি চেইনও তৈরি করে বাসায় রেখেছিলাম।”

মেয়ের বিয়ের জন্য গচ্ছিত এসব টাকা আর স্বর্ণালঙ্কার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।  

সাহেরা বেগম বলেন, মেয়ে যেন স্বাবলম্বী হয় সেজন্য সেলাইয়ের কাজ শিখিয়েছিলেন। বিয়ের পর মেয়েকে দেবেন বলে সেলাই মেশিনও কিনে রেখেছিলেন। আগুনে হারিয়েছেন সেই সেলাই মেশিনটিও।

আগুনে মাথা গোঁজার ঠাঁই আর সম্বল পুড়িয়ে নিজের পোড়া ঘরের সামনে এক বৃদ্ধ

রাস্তায় পিঠা বিক্রি করেন ময়না বেগম। আর তার স্বামী মানুষের বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহের গাড়ি চালান। দুজনের রোজগারে নিজেদের একটা ঘর বানানোর জন্য কিছু টাকা ব্যাংকে রেখে জমিয়েছিলেন ময়না বেগম। ওর মধ্যে থেকে ৩০ হাজার টাকা তুলে রেখেছিলেন কলোনির ঘরে। 

ময়না বলেন, “৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছিলাম ফটিকছড়িতে বাবার বাড়ির জায়গায় ঘর বানানোর জন্য। কিন্তু সন্তানদের অসুস্থতার কারণে বাড়ি যেতে না পারায় টাকাগুলো ঘরেই ছিল। আগুনে সে টাকাগুলো সব পুড়ে গেছে।”

ময়না বেগমের মতো জমানো টাকা ছাই হতে দেখেছেন বেবী আক্তার। ধোঁয়া দেখে ছুটে এসেও রক্ষা করতে পারেননি কিছুই। 

বেবী আক্তারের স্বামীও মানুষের বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজ করেন। আর বেবী আক্তার চারটি বাসায় কাজ করে মাসে পান ১০ হাজার টাকা।

সকালে তার বাসায় যখন আগুন লেগেছিল তখন তিনি ছিলেন মানুষের বাসায় কাজে। স্বামী ছিলেন নিজের কাজেই।

বেবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে পাঁচলাইশ থানার পেছনে একটি বাসায় কাজে গিয়েছিলাম। বাসার বারান্দা মোছার সময় দেখি আগুনের ধোঁয়া। কাজ রেখে দ্রুত ছুটে আসি বাসায়। এসে দেখি কিছুই নেই।

“বাসায় একা থাকা ছোট মেয়েটিকে খুঁজে পাইনি। পরে শুনেছি এক ব্যক্তি আমার মেয়েকে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে গেছে।”

বাসায় কাজ করে এক সাথে কয়েক মাসের বেতন পেলেও পুরো টাকাই আগুনে পুড়েছে বেবীর।

অসহায় গলায় বেবী বলেন, “নিজের আয়ের টাকায় কিছু আসবাব, স্বর্ণালঙ্কার করেছিলাম। সেগুলো বাসায় রাখা ছিল।

“আর একটি বাসার মালিক চার মাস না থাকায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) একসাথে ১৫ হাজার টাকা বেতন দিয়েছে। সে টাকাগুলোও পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ ইউনিটের ১২টি গাড়ি দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ততোক্ষণে পুড়ে যায় বস্তির প্রায় ১০০টি ঘর।