লালদীঘিতে ২৪ জনকে হত্যার রায় ঘোষণা বিকালে

তিন দশক আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ আসামির কী শাস্তি হবে তা বিকালে জানা যাবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2020, 07:32 AM
Updated : 20 Jan 2020, 09:44 AM

সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন রায় ঘোষণার সময় ঠিক করে দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় নির্ধারিত থাকলেও তারা করেনি। আদালত বিকাল ৩টার পর রায় ঘোষণার জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন।”

এর আগে রোববার এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আত্মসমর্পণকারী চার আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

এরা হলেন- চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তৎকালীন কন্সটেবল মোস্তাফিজুর  রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন।

মামলায় অপর অভিযুক্ত সিএমপির কোতোয়ালি অঞ্চলের পেট্রোল ইনসপেক্টর জে সি মণ্ডল পলাতক আছেন।

গত ১৪ জানুয়ারি ৫৩তম সাক্ষী আইনজীবী শম্ভুনাথ নন্দীর সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন।

রোববার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন শেষে পাঁচ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পরে আদালত আসামি পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য সোমবার দিন রেখেছিলেন। কিন্তু আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন না করায় আদালত রায় ঘোষণার সময় ঠিক করেন। 

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বন্দরনগরীর লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভার দিন বেলা ১টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাক আদালত ভবনের দিকে এগোনোর সময় নির্বিচার গুলি ছোড়া শুরু হয়।

গুলিবর্ষণের পর আইনজীবীরা মানববেষ্টনি তৈরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে রক্ষা করে তাকে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন।

ওই দিনের ঘটনায় মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত হোসেন নিহত হন।

নিহতদের কারও লাশ পরিবারকে নিতে দেয়নি স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার; সবাইকে বলুয়ার দীঘি শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদী হয়ে এঘটনায় মামলা দায়ের করলেও বিএনপি সরকারের সময়ে মামলার কার্যক্রম এগোয়নি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। দুই দফা তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর আট পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজন এখন জীবিত আছেন। মৃত আসামিরা হলেন- সিএমপির কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা এবং কনস্টেবল আব্দুস সালাম ও বশির উদ্দিন।

মামলার বাদী মো. শহীদুল হুদা ও সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের এর মধ্যে মারা গেছেন।

২০০১ সালের মে থেকে ২০০৬ সালের ২৩ অগাস্ট এবং ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ মামলায় কারও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এরপর মামলা চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে আসার পর আবার সাক্ষ্যগ্রহণ গতি পায়।

মামলায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেফালী সরকার, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, সুভাষ চন্দ্র লালা, অশোক কুমার বিশ্বাস, হাসনা বানু, মাঈনুদ্দিন, আবু সৈয়দ এবং অশোক বিশ্বাস অন্যদের মধ্যে সাক্ষ্য দেন।

২০১৬ সালের ২৬ জুন আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে’ সেদিন গুলি চালানো হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে তা তার গায়ে লাগেনি। বিনা উসকানিতে সেদিন ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ ঘটানো হয়েছিল।

চট্টগ্রামের তখনকার পুলিশ কমিশনার ও মামলার আসামি রকিবুল হুদার নির্দেশে ওই ঘটনা ঘটানো হয় বলে আদালতকে বলেন মোশাররফ।