চট্টগ্রাম-৮: ভোট স্থগিতের দাবি বিএনপির প্রার্থীর

কেন্দ্র দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট স্থগিত করে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2020, 08:50 AM
Updated : 13 Jan 2020, 10:34 AM

সোমবার ভোটগ্রহণের মাঝপথে বেলা দেড়টার দিকে নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।

এর আগে সকালে ভোট শুরুর পর একটি কেন্দ্রের বাইরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন আবু সুফিয়ান।  

এর কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, সকাল থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বহিরাগত কর্মীরা অধিকাংশ কেন্দ্র দখলে নিয়েছে, বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে এবং গোপন বুথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা জোর করে ভোট দিচ্ছে।

“সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি ভোট স্থগিত করে পুনরায় নির্বাচন দিতে। লিখিত আবেদন করেছি। কেন্দ্র ও মাঠ পর্যায়ে যারা ভোটের কাজে আছেন তাদের সাথে আলোচনা করে সময় নিচ্ছি। ঘণ্টাখানেক পরে আবার আপনাদের জানাব।”

তিনি বলেন, “১৭০টি কেন্দ্রর মধ্যে অলমোস্ট সব কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। গোপন বুথে ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা ভোট দিচ্ছে।

“গতরাত থেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। সকাল থেকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে আবারো, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না যায়। কোনো ব্যবস্থা প্রশাসন নেয়নি। সকাল থেকে ভোটাররা বাধা ডিঙিয়ে কেন্দ্রে গেছে।”

আবু সুফিয়ান বলেন, “বহিরাগত সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশের উপস্থিতিতে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। গোপন বুথে জোর করে নৌকায় ভোট দিচ্ছে। পরিবেশ না পেয়ে বলেছি ভোট স্থগিত করতে, পুনর্নির্বাচন দিতে। কোনো পরিবেশ নেই। ভোটের নামে তামাশা ও ট্যাক্সের টাকা খরচের প্রহসন। আজ এটা বিশ্বাস জন্মেছে যে, এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন সম্ভব না।”

সংবাদ সম্মেলনে নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা বলেছি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বাইরে থেকে ছাত্রলীগ যুবলীগকর্মীরা কিভাবে সেখানে যেতে পারে?

“প্রতি কেন্দ্রে ৫০০- ১০০০ লোক অবস্থান নিয়েছে। আপনারা দেখেছেন কিছু ছেলে লাইন ধরে ভোট দিচ্ছে। সেখানে ভোটের লাইনে কোনো বয়স্ক, মধ্য বয়স্কদের দেখা যায়নি। সেখানে সব দলীয় ও বাইরের ছেলে। প্রহসনের নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে দেখানোর জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।”

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এসব অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান শাহাদত।

“১২০টি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও এখনো কিছু করতে পারেননি।”

হামলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ছাত্র-যুবলীগের ক্যাডাররা কেন্দ্র দখলে নিয়েছে। এজেন্টদের মেরে বের করে দেয়া হয়। ভোটারদের গতরাত থেকে হুমকি দেয়া হয় যেন না আসে।

“আমাদের নগর বিএনপির এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যুবদলের খোরশেদকে কোপানো হয়েছে। এডভোকেট ইছহাক, উনার ৮০ বছরের উপর বয়স, তাকেও মারা হয়েছে। এভাবে তারা ভোট উৎসব করছে। লাইনে লোক দাঁড় করিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করা হচ্ছে। এ অভিযোগগুলো রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছে। লিখিত আবেদন করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন প্রার্থী।”

নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “প্রতি সেন্টারে সেনা সদস্য থাকবে বলেছিলেন সিইসি ও ইসি। এখন রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, ইভিএমে কারিগরি ত্রুটি হলে সেটা দেখার জন্য সেনাবাহিনী থাকবে, ভোটের পরিবেশের জন্য নয়।”

মেয়রের পিএসের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ

চট্টগ্রামের মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের ব্যক্তিগত সহকারী রায়হান ইউসুফের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান।

তিনি বলেন, “সকালে আমি চান্দগাঁও আবাসিক সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দিতে যাই।

“এসময় মেয়র আ জ ম নাছিরের পিএস রায়হান ইউসুফের নেতৃত্বে কয়েকশ ছেলে ভোটদান বাধাগ্রস্ত করে, কেন্দ্র ঘিরে ফেলে। তারা আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। চান্দগাঁও যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছি সেখানে।”

অভযোগ অস্বীকার করে রায়হান ইউসুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইভিএমে কেন্দ্র দখলের কোনো সুযোগ নেই। তিনি সেখানে যাননি।

“বোয়ালখালীর নির্বাচনে ২২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, ছয় প্লাটুন র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ-আনসার সব আছে। বিএনপি প্রার্থী আমাকে চেনেন কিনা সন্দেহ। তার অভিযোগ বানোয়াট। ডাহা মিথ্যা কথা। তারা অপবাদের রাজনীতি করছে।”

অভিযোগের সত্যতা মেলেনি: রিটার্নিং কর্মকর্তা

এদিকে কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়ার বিষয়ে বিএনপিপ্রার্থীর অভিযোগের ‘সত্যতা সেভাবে পাওয়া যায়নি’ বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “উনারা সকালে কয়েকটি কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন, সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।”

ভোট স্থগিত চেয়ে বিএনপিপ্রার্থীর আবেদনের বিষয়ে মো. হাসানুজ্জামান বলেন, “উনাদের আবেদন এখনো আমার হাতে আসেনি। আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

কেন্দ্র দখলের অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “যখন যেখানে তারা বলেছেন, সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি পাঠিয়েছি।”

অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনারা যেভাবে বলছেন সেভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।”