ইভিএম নিয়ে আশ্বস্ত করলেন সিইসি

ইলেটকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বিএনপির আপত্তির প্রেক্ষাপটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা আশ্বাস্ত করেছেন, যন্ত্রে ভোট দেওয়ার এই পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2020, 10:26 AM
Updated : 8 Jan 2020, 10:55 AM

চট্টগ্রাম-৮ আসনে অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা ‘যৌক্তিকভাবে’ কমানো হবেও বলে জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি।

ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তির বিষয়টি তুলে ধরে প্রশ্ন করা হলে নূরুল হুদা বলেন, “ইভিএমে আপত্তির কোনো কারণ নেই। ইভিএমই একমাত্র উপায় যেখানে যার ভোট সে দেবে। ইভিএমে কোনো জাল ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। অন্য কেন্দ্রের কেউ এসে ভোট দিতে পারবে না। একবার ভোট দিলে কেউ আর ভোট দিতে পারবে না।”

ইভিএম নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সংশয় আছে জানানো হলে তিনি বলেন, “ইভিএম নিয়ে ভীতির কোনো কারণ নেই। সেখানে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে না, এটার নিশ্চয়তা দেয়া হবে। এটা যদি চালু হয় একসময় আর ভীতি থাকবে না।”

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “১৯৪৭ সাল এর পর থেকে যে নির্বাচন পদ্ধতি ছিল সেগুলোতে অনিয়ম ছিল। কোনো কোনো নির্বাচনে দেখা গেছে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হল, আবার রাতে আরেকজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, পরদিন গেজেটে আরেকজনের নাম ঘোষণা করা হয়। এরকম দেখেছি আমরা।

“নির্বাচনের কালচারটা অনেকদিন ধরেই এরকম নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। নির্বাচনের কালচার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। ইভিএম যদি দাঁড় করাতে পারি, তাহলে কারো ভোট কেউ দিতে পারবে না।”

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরীতে ইভিএমে ভোট নিয়ে অনিয়ম ও দলীয় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে উল্লেখ করে প্রশ্ন করা হলে সিইসি বলেন, “অভিযোগ তো করতেই পারে। অভিযোগ তো অভিযোগই। ভিত্তি আছে কিনা দেখতে হবে। অনেক অভিযোগ আছে যেগুলোর কোনো ভিত্তি থাকে না।”

একজন ভোটার ইভিএম পদ্ধতিতে নিজের ফিঙ্গার প্রিন্ট, স্মার্ট কার্ড, ভোটার নম্বর এবং আগের এনআইডি এই চার উপায়ের যে কোনো একটি ব্যবহার করে ভোট দিতে পারবেন বলে জানান সিইসি।

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে বিএনপি প্রার্থী ও দলীয় নেতাদের সংশয়ের কথা উল্লেখ করে তার মতামত জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনই করি। যাতে কারচুপি না হয়, ব্যালট ছিনতাই না হয়, পরিশ্রম লাঘব হয় সেজন্য ইভিএম চালু করেছি।”

ইভিএম পদ্ধতিতে প্রিসাইডিং অফিসারদের হাতে ২৫ শতাংশ ভোট থাকে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা চাঁদে ছবি দেখার মত, তখন তো দেশে একেবারে রায়ট হয়ে গেল। এটাও সেরকম একটা বিষয়। নির্বাচন বিধির কোথায় ১ পারসেন্ট, ২ পারসেন্ট, ৫ পারসেন্ট, ২৫ পারসেন্ট- এসব কোথাও নেই। কোত্থেকে যে তারা এসব বিষয় আনে। এরকম কোনো সুযোগ নেই।”

উপনির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বানিহনীর অতিরিক্ত সদস্য রাখা হবে না বলেও জানান নূরুল হুদা।

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিকভাবে থাকবে, অতিরিক্ত রাখা হবে না, কমানো হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তো অনেকগুলো স্তর থাকে, কিছু থাকে কেন্দ্রে, কিছু থাকে স্ট্রাইকিং ফোর্স, কিছু থাকে মোবইল ফোর্স। র‌্যাব, বিজিবি, আনসার পুলিশ থাকে।

“তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে- বিজিবি কমানো হবে, পুলিশ কমানো হবে, সংখ্যার দিক থেকে যৌক্তিকভাবে কমানো হবে।”

তিনি বলেন, “এখানে (চট্টগ্রাম-৮) নির্বাচনের পরিবেশ খুবই সুন্দর। প্রার্থীদের মধ্যে কোনো অভিযোগ নেই। কারো যদি কোনো অভিযোগ থাকে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জানাবেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

“আমরা আশ্বস্ত হয়েছি যে, নির্বাচন সুন্দর, প্রতিযোগিতামূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে। ভোটাররা যে প্রার্থীকে ভোট দেবেন, যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি জয়ী হবেন।”

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান।