মৃত্যুবার্ষিকীতে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ-শ্রদ্ধা

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রামের প্রতি তার দরদ এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে তার নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 08:00 PM
Updated : 15 Dec 2019, 08:05 PM

রোববার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভায় তিনি বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরীর রাজনীতি ছিল ব্যক্তিক্রমধর্মী, সেবাধর্মী রাজনীতি। মেয়র থাকাকালে এই নগরীতে তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছিলেন। মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পোঁছে দিয়েছিলেন।”

২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে মারা যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছিলেন টানা তিনবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে।

সিটি মেয়র থাকাকালে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল উল্লেখ করে আমু বলেন, “মিটিংয়ে একদিন নেত্রী বলেছিলেন, চট্টগ্রামের কোনো প্রকল্প মহিউদ্দিন চৌধুরী একনেকে নিয়ে যাননি এবং প্রকল্প পাশ করে দিতে সুপারিশও করেননি। তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়ন করেছেন।

“মহিউদ্দিন চৌধুরী বলতেন, চট্টগ্রামের যে ইনকাম সেটার ন্যায্য ভাগ যদি চট্টগ্রামের উন্নয়নে না দেন আমি পোর্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব। তিনি এত বেশি চট্টগ্রামকে ভালোবাসতেন, যার কারণে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় দুইবার এবং আওয়ামী লীগে থাকা অবস্থায় একবারসহ তিনবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।”

রাজপথে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভূমিকা তুলে ধরে আমু বলেন, “আমরা যখন আন্দোলন সংগ্রাম করছিলাম এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম চট্টগ্রাম বন্দর ও ল্যান্ড পোর্ট বন্ধ করা না গেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো লাভ হবে না। আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে গেলে এই দুইটা বন্ধ করতে হবে।

“এ সময় নেত্রী আমাকে বললেন আপনার মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ডাকেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন পারবে কি না? আমি বললাম আপনি দায়িত্ব দিলে মহিউদ্দিন চৌধুরী অবশ্যই পারবে। আমি ডাকলাম তিনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী) গেলেন, বন্দর বন্ধ করে দিলেন।”

দল থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তা ফিরিয়ে দেয়ার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমু বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তিনি নেননি। বলেছেন, আমি চট্টগ্রামের রাজনীতি করব। চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকার রাজনীতি করব না। প্রেসিডিয়াম সদস্য হব না। তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য করা হলেও প্রেসিডিয়াম পদ নেননি।”

শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো নেতার প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতাকে আমরা হারিয়েছি। তার মতো নেতার আরও অনেকদিন প্রয়োজন ছিল।”

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, দলের মধ্যে নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। তবে এর সমাপ্তিও যেন সুন্দরভাবে হয়ে থাকে।

“পূর্বসূরিদের মধ্যেও নেতত্ব গ্রহণে প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু তারা এমন কিছু করেনি যাতে দলের ক্ষতি হয়।”

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলার সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, নঈম উদ্দিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন, সাংসদ এমএ লতিফ।

এর আগে সকালে নগরীর চশমা হিল এলাকায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রামের সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।