শিশুমৃত্যুর অভিযোগ: ‘বিশেষ মহলের’ হাত দেখছে ম্যাক্স হাসপাতাল

ম্যাক্স হাসপাতালে ‘অবেহলা ও ভুল চিকিৎসায়’ যেসব মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে তার নেপথ্যে ‘বিশেষ মহল’ সক্রিয় বলে দাবি করেছে হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2019, 10:24 AM
Updated : 10 Dec 2019, 10:36 AM

মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে ম্যাক্স হাসপাতাল লিমিটেড চট্টগ্রামের এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী খান।

ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশিত হয়েছে দাবি করে এর নেপথ্যে থাকা ‘বিশেষ মহলটি’ খুঁজে বের করতে সংবাদকর্মীদেরই আহ্বান জানান তিনি।

লিয়াকত আলী খান বলেন, ৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ম্যাক্স হাসপাতালকে নিয়ে একটি বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়, যেখানে গর্ভাবস্থায় একটি শিশুর মৃত্যুর ব্যাপারে ম্যাক্স হাসপাতালকে দায়ী করা হয়।

“এই প্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য হল, এ ঘটনার সাথে ম্যাক্স হাসাপাতালের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই।”

গর্ভাবস্থায় অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৮ ডিসেম্বর আদালতে মামলা করেন আইনজীবী ইউসুফ আলম মাসুদ। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

ওই মামলার তিন আসামির মধ্যে লিয়াকত আলী ছাড়াও রয়েছে হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা ফেরদৌস এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি চিকিৎসক এইচ এম রাকিবুল হক।

এদের মধ্যে আফরোজা ফেরদৌস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (অবস অ্যান্ড গাইনি) এবং এইচ এম রাকিবুল হক একই হাসপাতালের সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড আল্ট্রাসাউন্ড এ কর্মরত আছেন। তারা দুজনেই ম্যাক্স হাসপাতালে রোগী দেখেন।

মামলায় ইউসুফ আলম মাসুদ অভিযোগ করেছেন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে ১ ডিসেম্বর ম্যাক্স হাসপাতালে আফরোজা ফেরদৌসকে দেখানো হয় এবং তার পরামর্শে এইচ এম রাকিবুল হক আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। দু’জনই জানিয়েছিলেন গর্ভের শিশুর অবস্থা স্বাভাবিক।

পরে ৩ ডিসেম্বর নগরীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে সন্তান প্রসব হলে সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটি গর্ভেই মারা গেছে জানান বলে অভিযোগে করেন ইউসুফ আলম মাসুদ।

ইউসুফল আলম মাসুদের অভিযোগ, তার সন্তানের শরীরের পচন ধরেছিল এবং কয়েকদিন আগেই সে মারা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিয়াকত আলী খান বলেন, “আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে সবকিছু স্বাভাবিক আছে বলে ডা. আফরোজা ফেরদৌস রোগীকে জানান এবং এরপর ব্যথা উঠলে যে কোনো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।

“পরবর্তীতে রোগী ডা. আফরোজা ফেরদৌসের সাথে যোগাযোগ না করে ৩ ডিসেম্বর দুপুরে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ডিউটি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রোগীর ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। সেখানকার ডিউটি ডাক্তার জানান শারমিন একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেছে। মৃত বাচ্চা প্রসবের পর ডা. আফরোজার সাথে যোগাযোগ করা হলে মানবিক কারণে তিনি সেখানে যান।

“দুঃখজনক এই ঘটনা জানার পর আমি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, রোগী ছয় ঘণ্টা প্রসব বেদনা অনুভব করেছিল এবং জটিল অবস্থায় ছিল। জরায়ু থেকে বাচ্চাটির মাথা অর্ধেক বের হওয়া ছিল, অসম্ভব চেষ্টায় শিশুটির ডেলিভারি হয়।”

ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, “রোগীর জরুরি প্রসূতি সেবা মেট্রোপলিটন হাসপাতালেই দেয়া হয়। সুতরাং এ ঘটনায় ম্যাক্স হাসপাতালের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। রোগী এখানে ভর্তিই হয়নি। অথচ অহেতুক আমাদের অভিযুক্ত করা হল।”

ওই রোগীর আলট্রাসনোগ্রামের রিপোর্ট দেখিয়ে লিয়াকত আলী খান বলেন, “১ ডিসেম্বর করা ওই পরীক্ষায় শিশুটির হার্ট বিটসহ সব প্যারামিটার ভালো ছিল। যদি শিশুর মাথা জরায়ু থেকে বেরিয়ে থাকে তাহলে সাফোকেশনের কারণে শিশুটি মৃত্যুর সম্ভবনা বেশি।”

২ ডিসেম্বর আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় টেলিফোনে কথা বলছিলেন এবং অমনযোগী ছিলেন এমন অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক এইচ এম রাকিবুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমি কাজের সময় ফোন এটেন্ড করি না।

“ওইদিন তিনি (ইউসুফ আলম মাসুদ) আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় সেই কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন কিনা তা আমার মনে পড়ে না। হয়তো আমি ডিকটেনশন দিচ্ছিলাম, তা শুনে তিনি ভেবেছেন আমি ফোনে কথা বলছি।”

এর আগে গত ২১ নভেম্বর শিশু জিহান সারোয়ার প্রিয়র মৃত্যুর বিষয়ে লিয়াকত আলী খান বলেন, “আমরা কোনো রোগীকেই ফেরত দিই না। শিশু হাসপাতাল তার (প্রিয়) অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারছিল না।

“তাই আমাদের এখানে আসে। ব্যাকটেরিয়াল ম্যানেনজাইটিস হলে উন্নত বিশ্বে ৮০ শতাংশ রোগী মারা যায়। কয়েকদিন চিকিৎসা করে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তারপর শিশুটি মারা গেল। অথচ আমাদের অভিযুক্ত করা হল।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক আবুল কাশেম মাসুদ, মজিবুল হক খান, ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।