এবার ম্যাক্স হাসপাতালে ‘অবহেলায়’ গর্ভেই শিশুমৃত্যুর অভিযোগ, মামলা

অবহেলায় মায়ের গর্ভে শিশুমৃত্যুর অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক আইনজীবী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2019, 01:38 PM
Updated : 8 Dec 2019, 01:38 PM

রোববার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে মামলাটি করেন আইনজীবী ইউসুফ আলম মাসুদ।

আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশনকে (পিবিআই) এ বিষয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে গত দেড় বছরে এ নিয়ে তিনটি শিশুর ‘অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর’ অভিযোগ উঠল। 

দুই দিন আগে করা ওই হাসপাতালে এক প্রসূতির আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে গর্ভের শিশুর অবস্থা ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ করা হলেও ৩ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার করার পর জানানো হয়, শিশুটি গর্ভেই মারা গেছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে- ম্যাক্স হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান, চিকিৎসক ডা. আফরোজা ফেরদৌস এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফির চিকিৎসক ডা. এইচ এম রাকিবুল হককে।

এদের মধ্যে আফরোজা ফেরদৌস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (অবস অ্যান্ড গাইনি) এবং এইচ এম রাকিবুল হক সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড আল্ট্রাসাউন্ডে কর্মরত আছেন। তারা দুজনেই ম্যাক্স হাসপাতালে রোগী দেখে থাকেন।

রোববার করা মামলার বাদীর আইনজীবী আবদুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকমকে বলেন, অবহেলাজনিত মৃত্যু এবং দুষ্কর্মে সহযোগিতার অভিযোগে তিনজনকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক)/১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

মামলার বাদী ইউসুফ আলম মাসুদ বলেন, “আদালত আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

“পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজনকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি একজন নিরপেক্ষ গাইনি বিশেষজ্ঞের মতামত নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর পূর্ব নির্ধারিত ডেলিভারির ডেট ছিল ১৭ ডিসেম্বর। ডা. আফরোজা ফেরদৌসের অধীনে তার নিয়মিত চেকআপ চলছিল। ১ ডিসেম্বর পেটে ব্যথা অনুভব করায় তাকে ওই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই।

“ডা. আফরোজা ফেরদৌস আমার স্ত্রীকে দেখে ও রিপোর্ট দেখে বলেন, ১৭ তারিখেই ডেলিভারির ডেট ঠিক আছে। এই ব্যথা, সেই ব্যথা না। ব্যথা কমাতে তিনি ওষুধও দেন। আরেকটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বললেন। সেদিন রাত পৌনে দশটায় ম্যাক্স হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাই।”

ইউসুফ আলম মাসুদ বলেন, “সেদিন আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা ডা. এইচ এম রাকিবুল হকও বলেন, সব ঠিক আছে। ২ ডিসেম্বর রাতে গিয়ে ডা. আফরোজা ফেরদৌসকে রিপোর্ট দেখাই। তখনও তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি হবে। এরমধ্যে ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথাও কমেছে। ৩ ডিসেম্বর দুইটার দিকে আবার তীব্র ব্যথা শুরু হয়। আমার শ্যালক তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে যায়।

“আমি আদালতের চেম্বার থেকে রওনা দিই হাসপাতালের দিকে। আমি পৌঁছার আগেই ডেলিভারি হয়। সেখানকার ডাক্তার জানালেন, বাচ্চা গর্ভাবস্থায় মারা গেছে। দেখলাম- আমার কন্যার শরীর গলিত। গায়ের চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে গর্ভেই।”

ইউসুফ আলম মাসুদ বলেন, “তাহলে একদিন আগের আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে কী আসল? তারা কেউ বুঝতেই পারলেন না এই ব্যথা কেন? বাচ্চা কয়েকদিন আগেই গর্ভে মারা গেছে সেটাও তাদের কোনো পরীক্ষায় ধরা পড়ল না, এটা কেমন চিকিৎসা? এভাবে ম্যাক্স হাসপাতালে অবহেলা-অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতিতে একের পর এক শিশু মারা যাচ্ছে। তাই আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি।”

ম্যাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আসামি করার বিষয়ে আইনজীবী ইউসুফ আলম মাসুদ বলেন, অদক্ষ-অযোগ্য ও অমনোযোগী লোকজনদের দিয়ে চিকিৎসার নামে এই দুষ্কর্মে সহযোগিতা করায় ডা. লিয়াকত আলী খানকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর ম্যাক্স হাসপাতালে ‘অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায়’ জিহান সারোয়ার প্রিয় নামের ১৩ মাস বয়সী এক ছেলে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ করে তার পরিবার।

ওই ঘটনার তদন্ত চেয়ে শিশুটির মা মোহছেনা ঝর্ণা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

গত বছরের ২৮ জুন রাইফা নামের চার বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর পর এই ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতি, অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।