শুক্রবার বিকেলে নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে আয়োজিত নবান্ন উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ দাবির সাথে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
শিশুদের সাংস্কৃতিক জগত- শিশুমেলা, এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো নগরীতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করল। শুরুতে এ আয়োজন করা হত ডিসি হিলে।
শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উৎসব উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, “আমাদের ডিসি হিলে সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বই মেলা এসব হত। যে কোনোভাবে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরিচ্ছন্নতার নামে। মেয়রের কাছে দাবি জানাই, ডিসি হিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে।”
“এ ধরনের আয়োজন যত বেশি হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টির সাথে তত বেশি পরিচিত হবে। এক সময় শিশুমেলার এ আয়োজন ডিসি হিলে হত। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ডিসি হিল এক সময় সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, কেন জানি না এক ধরনের বাধার কারণে সেটা ম্রীয়মান হয়ে গেছে।”
মেয়র নাছির বলেন, “চট্টগ্রামে তো বেশি সুযোগ নেই, উন্মুক্ত স্থানও নেই। প্রায় সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এখানে হত। ডিসি হিলে বছরে এখন দুই-চারটি অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়।
“বরং অনুষ্ঠান পরিচালিত না হওয়ায় ডিসি হিল এখন অনেকটা জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের বলব, যে সমস্ত কারণে সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো চিহ্নিত করে প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা করে কীভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।”
“আজ মেয়র মহোদয় বলেছেন, প্রয়োজনে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মেয়রের নেতৃত্বে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। কোন বাধায় আটকে আছে তা আমরা অপসারণ করতে চাই। সামনে মুজিববর্ষ, চট্টগ্রামে মুজিববর্ষ আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দু যেন ডিসি হিল হয় সে উদ্যোগ নিতে হবে।”
এর আগে গ্রামবাংলার তিনজন প্রান্তিক কৃষক হারুণুর রশিদ, মো. সোহেল ও সোলায়মান চৌধুরী বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। সঙ্গে ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির সমন্বয়ক রুবেল দাশ প্রিন্স, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ ও সমাজ সেবক সাহাব উদ্দিন।
২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে ‘অপরিচ্ছন্নতার’ অজুহাত দিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ডিসি হিলে বছরে তিনটি ছাড়া অন্য অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে আহ্বান জানান।
এই তিন অনুষ্ঠান হল- পহেলা বৈশাখ এবং রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী।
এরপর থেকেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ডিসি হিলে আর কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
এরপর প্রায় পাঁচ মাস পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামের একটি আবৃত্তি সংগঠন ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পায়। তবে এরপর আর উল্লেখযোগ্য কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে উন্মুক্ত মঞ্চের পাশাপাশি পাহাড়ের চূড়ায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবন রয়েছে। ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাইকের আওয়াজে তাদের পারিবারিক জীবনের ব্যাঘাত হয় বলে প্রশাসন থেকে বলা হয়।
আরও খবর