ধারণানির্ভর খবর বিভ্রান্তি ছড়ায়: মেয়র নাছির

উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ধারণানির্ভর এবং নিজস্ব চিন্তা প্রসূত সংবাদ নগরবাসীর মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে বলে তা এড়াতে গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2019, 03:04 PM
Updated : 3 Dec 2019, 03:04 PM

মঙ্গলবার নগরীর আন্দরকিল্লায় নগর ভবনে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকান্ড’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সহায়তা চান।

সম্প্রতি নগরীতে ধুলাবালির প্রকোপ, মশার আধিক্য, সড়ক উন্নয়নে দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

নাছির বলেন, বিমানবন্দর সড়ক চার লেইনে উন্নীত করা হচ্ছে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোড জাইকার অর্থায়নে নতুন করে করা হচ্ছে। ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক দুটির প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। ডিটি রোডের দেওয়ানহাট থেকে অলংকার, আমবাগান এলাকার সড়ক, আরাকান সড়কের বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট অংশ এবং হাটহাজারী সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

“এগুলো আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শুষ্ক মৌসুম এ কাজের উপযুক্ত সময়,” বলেন মেয়র।

পিসি রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কের কাজ জাইকার অর্থায়নে হচ্ছে বলে প্রকল্পের পুরোটি ক্ষেত্রে তাদের নজরদারি থাকার কথা বলেন তিনি।

“একাংশের কাজ শেষ করে তারা মান যাচাই করে অনুমতি না দিলে পরের অংশের কাজ শুরু করা যায় না। প্রতি অংশের কাজ শেষ হলে তা যাচাই করে বুয়েট থেকে প্রতিবেদন নিতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ।”

মেয়র নাছির বলেন, “সাধারণ মানুষের এ কাজের ধরন সম্পর্কে ধারণা নেই। এরপর যদি ধারণা বশবর্তী হয়ে বা নিজস্ব চিন্তা প্রসূত কোনো সংবাদ হয়, তা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করে। উন্নত বিশ্বে এভাবে সংবাদ করে না। আমাদের এখানে করা হয়।

“আশা করি, আপনারা সব রকম বিষয় যাচাই করে সংবাদ প্রকাশ করবেন। কাজ শেষ হওয়ার আগে তো ঢালাওভাবে বলা যায় না যে কাজ ভালো হয়নি। আর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিয়মেই আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র হকার উচ্ছেদে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন, যত্রতত্র ও নির্দিষ্ট সময় ছাড়া আর্বজনা ফেলায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শতভাগ সফল না হওয়া এবং মশার ওষুধ ছিটানোতে অর্থ সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঘরে ঘরে ঝুড়ি দেওয়া এবং নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার পরেও যত্রতত্র ময়লা ফেলায় ‘ক্লিন সিটির’ ধারণা শতভাগ সফল হচ্ছে না।

“সবাই আমাদের দিকে আঙ্গুল তোলেন। কিন্তু যদি সময় না মেনে প্রতিনিয়ত ময়লা ফেলতে থাকেন এবং যত্রতত্র তাহলে সমালোচনা সহ্য করা ছাড়া আর কী বা করার আছে।”

নিউ মার্কেট এলাকার হকার উচ্ছেদের বিষয়ে নাছির বলেন, “চেষ্টা তো কম করিনি। এটা যেন লুকোচুরি খেলার মতো। তাদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করেছি। নরম-গরম সবরকম বলেছি। কয়দিন ঠিক থাকে, আবার বসে।

“আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট একজন। পুলিশ না পেলে তো উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায় না। আর ক্রেতা পান বলেই তারা বসেন। না পেলে তো বসতেন না।”

মশা নিধনের বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, “ব্যাপকভাবে ওষুধ ছিটানো খুব ব্যয়বহুল। সেই অর্থ আমাদের নেই। ব্যাপক ওষুধ ছিটানোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। অনেকে বাড়িতে এ ওষুধ ছিটাতেও দেয় না।

ধুলাবালির বিষয়ে তিনি বলেন, “এতে উঠতি বয়সীদের খুব ক্ষতি হয়। প্রত্যেককে সচেতন যদি না হয় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। যেসব প্রতিষ্ঠান কন্সট্রাকশন কাজ করছে, তারা যেন সচেতন হয়।”

নগরীর সার্কিট হাউজ সংলগ্ন শিশু পার্কটি আবারো আগের লিজ গ্রহীতাকে বরাদ্দ নবায়ন বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, “জমিটি আমাদের না, এটি শিশু পার্ক করার শর্তে আমাদের দেওয়া হয়। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি তাদের (বরাদ্দ গ্রহীতা) বাদ দিই, তাহলে হয়ত তারা আদালতে যেতে পারে। আবার অন্য কিছু করলে জমির বরাদ্দও বাতিল হয়ে যাবে।

“এমনিতে আমরা মামলায় জর্জরিত। সাড়ে তিনশ থেকে চারশ মামলা। এগুলো শুরু হয় শেষ হয় না। কাজ করবো নাকি মামলা করব।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালেহ আহমদ, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া ও মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম।