চট্টগ্রামের ৫ নারীকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ পুরস্কার

সামাজিক ও পারিবারিক বাধা অতিক্রম  করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল চট্টগ্রামের পাঁচ নারীকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতার’ পুরস্কার দিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 01:27 PM
Updated : 13 Nov 2019, 01:47 PM

বুধবার নগরীর ষোলশহরে এলজিইডি মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়।

জয়িতা সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, “দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়ন হয়েছে, ক্ষমতায়ন হয়েছে। তার প্রমাণ আপনারা।

"তারপরও আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। আমরা এখনো বাল্যবিবাহ পুরোপুরি রোধ করতে পারি নাই। দেশরত্ন শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাল্য বিবাহের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে, সেটা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।"

তিনি বলেন, “দেখা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে ও যানবাহনে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। দুঃখের সাথে বলতে হয় যে শিশুরাও কিন্তু নিরাপদ নয়। শিশুদের শেষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল হল পরিবার, সেখানে দেখা গেছে যে মা-বাবার কাছেও শিশুরা নিরাপদ নয়।

“সরকার অনেক আইনও করেছে কিন্তু কোন দেশে সরকারের পক্ষে একা এগুলো রোধ করা সম্ভব না, সেজন্য দরকার সকলকে একত্রিত হয়ে কাজ করা।”

সবাই এক্যবদ্ধ হয়ে এদেশকে নারী ও শিশু নির্যাতন মুক্ত দেশগড়ে তুলতে আহ্বান জানান ইন্দিরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন বিশ্বে সততার শীর্ষে। অতীতে যে আরেক জন নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি ছিলেন বিশ্বে দুর্নীতির শীর্ষে।

“দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে নারী নীতি প্রণয়ণ করেছিল আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে রাতের আঁধারে নারী নীতি বাতিল করে দিয়েছিল। রাজপথে আমরা যারা কর্মী ছিলাম, আমরা কিন্তু রেহাই পাইনি। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আজ পর্যন্ত কেউ রাজপথে নির্যাতিত হয়নি।”

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মোট ৫৫ জন জয়িতার মধ্যে পাঁচজনকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ নির্বাচন করা হয়।

এরা হলেন- নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তী, অর্থনেতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী কক্সবাজার জেলার ইয়াছমিন আক্তার, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ডা. সুপর্ণা দে সিম্পু, সফল জননী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সপনেহার বেগম, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় বান্দরবন জেলার পাইংম্রাউ মার্মা।

বীরাঙ্গনা রত্না চক্রবর্তী বলেন, “১৯৭১ সালে পাক বাহিনী আমাদের গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে লুটপাট শুরু করে। তারপর আমি ঝোঁপে আশ্রয় নেই। পাক বাহিনী আমাকে ঝোঁপ থেকে তুলে নিয়ে দোহাজারি ক্যাম্পে দীর্ঘ একমাস নির্যাতন করে মৃতপ্রায় অবস্থায় বাইরে ফেলে রাখে।

"সেখান থেকে বাদল চক্রবর্তী নামের একজন উদ্ধার করে সুস্থ করেন। বিয়ে করে আমাকে জীবন বাঁচানোর সুযোগ দিয়েছেন। ২০১৯ সালে আমি বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি।"

ডা. সুপর্ণা দে সিম্পু বলেন, “আমার দ্বিতীয় সন্তান জন্মের দিনে বিসিএস পরীক্ষা দিই। এবং বর্তমানে আমি দুটো সন্তান নিয়ে চাকরিটাকে কখনো বোঝা হিসেবে মনে করছি না। নারীদের স্বপ্ন থাকলে কোনো বাধাই বাধা হয়ে থাকতে পারে না, যদি পরিবার পাশে থাকে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান। এতে অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুন নেছা, মহিলা আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দীন বক্তব্য রাখেন।