‘অন্তর্কলহ’ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বড় দুর্বলতা: কাদের

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অন্তর্কলহই বড় দুর্বলতা বলে মনে করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 10:04 AM
Updated : 13 Nov 2019, 10:04 AM

বুধবার দুপুরে নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কাদেরের বক্তব্যের আগেরদিনই মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে নগর যুবলীগ আয়োজিত সমাবেশে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ক্ষুব্ধ হয়ে বক্তব্য না দিয়েই চলে যান।

বুধবারের সভায় প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের বলেন, “চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যখন অবাঞ্ছিত অপ্রীতিকর ঘটনা হয় তুচ্ছ কারণে তখন মনে বড় কষ্ট লাগে। বড় দুঃখ পাই। সামান্য কারণে একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যখন দেখি আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু কষ্ট লাগে, দুঃখ পাই।

“এই চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যে কলহ দেখি এটাই চট্টগ্রামের বড় দুর্বলতা। নেত্রী শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “যারা অন্তর্কলহ করবে, অপকর্ম করবে, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা করবে সেসব অপকর্মকারীদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। গুটি কয়েক খারাপ লোকের জন্য গোটা আওয়ামী লীগ বদনামের ভাগিদার হবে না। গোটা আওয়ামী লীগের ভালো লোকদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “খারাপ আচরণ উন্নয়নকে ম্লান করে দিতে পারে। আমরা পরিবর্তন চাই শিকড়ের সাথে যুক্ত যে পরিবর্তন। সে পরিবর্তন চাই না যেটা আওয়ামী লীগের আদর্শের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন।

“ট্র্যাডিশন চাই, সেটা হচ্ছে সিনিয়র ‍জুনিয়রকে স্নেহ করবে, জুনিয়র সিনিয়রকে সম্মান করবে। এখানে আমরা ডিজিটাল চাই না। আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র অক্ষুন্ন রাখতে হবে, সেটাই ট্র্যাডিশন। মানুষের মাঝে থেকেই পরিবর্তনের ধারা এগিয়ে নিতে হবে।”

প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “শুধু ব্যবসা করলে তিনি দেশের এক নম্বর ধনী হতেন। কিন্তু রাজনীতিকে তিনি মানি মেকিং মেশিন করেননি। আজ অনেকে রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্য মনে করে।

“জনগণকে তিনি ভালোবাসতেন বলেই তার প্রতি জনগণের ভালোবাসা আজও দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। চট্টগ্রামের সমার্থক হয়ে গিয়েছিল দুই নাম- বাবু ভাই ও মহিউদ্দিন চৌধুরী।”

বাবুর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান

সভায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর দল যখন মহাবিপর্যয়ে তখন সব চক্রান্ত উপেক্ষা করে যারা চট্টগ্রামের মাটিতে দলের রাজনীতি করেছেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের একজন আখতারুজ্জামান বাবু।

দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “তিনি রাজনীতিকে ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। অনেক বিত্ত বৈভবের মালিক রাজনীতিতে এসে রাজনীতিকে ক্রয় করতে চায়। যারা রাজনীতিকে অর্থ দিয়ে কিনতে চান তাদের বলব বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে শেখার জন্য, যার অর্থ-বিত্ত থাকার পরও রাজনীতিকে কেনার চেষ্টা করেননি। তিনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে কখনও বেঈমানি করেননি।”

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের পর দুঃসময়ে যখন অনেক বড় বড় নেতা আস্থার সংকটে ভুগেছিলেন তখন তিনি (আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) আস্থা হারাননি। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে অনেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টের লোভে পড়েছিলেন তখন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দল ছেড়ে যাননি বরং নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিয়ে দলের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন।

“তাদের সেই ত্যাগে আজ দল টানা তৃতীয় বারের মত ক্ষমতায়। তিনি অসময়ে চলে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে আজ যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখি তা দেখতে হত না। যেভাবে শুধু নিজের দল ভারির রাজনীতি আজকে হয়, এ সময়ে তিনি বেঁচে থাকলে তার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের অনেক সংকট থেকে মুক্তি দিত।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “বাবু ভাই বিত্তশালী ছিলেন কিন্তু সাধারণ মানুষকে আপন করে টেনে নিতেন, আজ বিত্তবানরা দলকে নিজের বাবার সম্পত্তিতে পরিণত করতে চান। উনার সান্নিধ্য পেয়েছি। উনার আদর্শ ধারণ করতে হবে।”

সভায় আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, “তিনি আপনাদের মাঝে বেঁচে আছেন। এটাই বড় পাওয়া একজন রাজনীতিবিদের জন্য। ব্যক্তি জীবনে সফল ব্যবসায়ী ছিলেন, ব্যবসার জন্য রাজনীতি করেননি।

“পঁচাত্তরের পর আওয়ামী লীগ করার মানুষ পাওয়া যায়নি তখন। আজ অনেকে দল করতে চায়। দেশ আজ গর্ব করার মত জায়গায় পৌঁছেছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র চায় আমাদের ধ্বংস করতে, তারা বসে নেই। আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টিকে আছে দলীয় নেতাকর্মীর কারণে।”

দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, নোমান আল মাহমুদ, আবুল কালাম আজাদ, শাহজাদা মহিউদ্দিন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরী।