মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়া চবির ‘অযোগ্য’ ভর্তিচ্ছুদের পাশে ছাত্র সংগঠনগুলো

মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় জায়গা পেয়েও ভর্তির ‘অযোগ্য’ বিবেচিত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 01:02 PM
Updated : 11 Nov 2019, 01:02 PM

ভর্তির সুযোগের দাবিতে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পাদদেশে তাদের মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতারাসহ চবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে চবির বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার পরও একদল শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছেন না, যারা গতবারও ভর্তির আবেদনের যোগ্য ছিলেন।

এরা যে ভর্তি হতে পারবে না তা বিজ্ঞপ্তিতে বলা জানানো হয়েছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের ভাষ্য। কিন্তু এই শিক্ষার্থীরা বলছে, বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। তাছাড়া অযোগ্য হলে তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হলো কেন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান তিতাস।

বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ রূপক বলেন, আমরা বঞ্চিতদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। প্রশাসনের হেয়ালিপনা মনোভাবের কারণে চার শতাধিক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

“এটা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, যারা দূর-দূরান্ত থেকে কষ্ট করে, টাকা খরচ করে যোগ্যতা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় এসেছে, তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।”

চবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম উদ্দিন ফয়সাল পারভেজ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যারা আছেন, তারা এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে এ শিক্ষার্থীগুলো উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদেরকে মামলা-হামলা দেওয়ার মতো আচরণ না করে যৌক্তিক দাবি মেনে নিন।”

ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ভর্তি পরীক্ষা কমিটির ভুলের কারণে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে। প্রশাসন চাইলেই মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া এসব শিক্ষার্থীদের ভর্তি গ্রহণ করতে পারে।

পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ার পর তারা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অব্যবস্থাপনার’ কারণে তাদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে।

তাছাড়া দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এসে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের হাজার হাজার অর্থ ব্যয় ও ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়েছে। এসবে দায় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে; তাদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে।

মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করে চবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, “ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন হয়েছে। কিন্তু সার্কুলারে অসংগতির কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারছেনা।

“যেখানে অস্পষ্টতা থাকে, সেখানেই জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত, তাদের অভিভাবকরা আসছে। আমরা তাদেরকে স্পষ্ট কোন জবাব দিতে পারছি না। কতটা অসহায় আর নির্মমতার শিকার হলে এভাবে তারা সাহায্য চাইতে পারে। যেহেতু ছেলেমেয়েগুলোকে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে।"

মানববন্ধনে চবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, “ছাত্রলীগ সবসময় যৌক্তিক দাবির পাশে থাকে। এ ঘটনায় কাউকে দোষ দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া উচিত নয়।

“জটিলতা দূর করে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করুন। কারো চোখের জল নয়, আমরা চাই সুষ্ঠু সমাধান। উপাচার্য মহোদয় সবার সাথে সম্মিলিত ভাবে এ বিষয়টি সমাধান করবেন বলে আশা করি।"

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আইরিন সুলতানা বলেন, “ভুল প্রশাসনের হয়েছে, শিক্ষার্থীদেরও হয়েছে। ভুল শুধরে নিয়ে তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দিন। তাদের স্বপ্নটাকে ভেঙে দিয়ে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবেন না।”

সমাজতাত্ত্বিক ছাত্রফন্টের সাধারণ সম্পাদক সায়মা আক্তার নিশো বলেন, “এটা একটি যৌক্তিক দাবি। ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষার আগে বলা হয়েছে তোমরা পরীক্ষা দিয়ে দাও, পরে বিষয়টি আমরা দেখব।

“এখানে কি কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে নাকি। যেখানে টাকা নেওয়া হবে, কিন্তু যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও ভর্তি নেওয়া হবে না। যে ভুল হয়েছে তার দায় প্রশাসনের, তার দায় শিক্ষার্থীরা নেবে না।”

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ধীষণ প্রদীপ চাকমা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হয়। যারা ভর্তি পরীক্ষায় মেধার প্রমাণ দিয়েছে তাদেরকে অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনার দায় মানোন্নয়নকৃত শিক্ষার্থীদের উপর না চাপিয়ে এবছর তাদের ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। নতুবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।”

মানববন্ধনে দুই শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ৪ নভেম্বরও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন এসব শিক্ষার্থীরা।