নতুন সড়ক আইনে বিক্ষোভের শঙ্কা শ্রমিক নেতার

নতুন সড়ক আইন পুরোপুরি কার্যকর করতে গেলে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের এক পরিবহন শ্রমিক নেতা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2019, 02:59 PM
Updated : 7 Nov 2019, 02:59 PM

পুলিশের এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই শঙ্কা প্রকাশের পর চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি বলেছেন, শ্রমিক সংগঠনগুলো যেন বিক্ষোভে না গিয়ে সরকারকে তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি আগে জানায়।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন নিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্সে পরিবহন মালিক, শ্রমিক নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসে পুলিশ।

গত বছর ঢাকার সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী প্রাণ হারানোর পর দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তির বিধান কঠোর করে নতুন আইন প্রণয়ন হয়, যা কার্যকর হয়েছে গত ১ নভেম্বর থেকে।

সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, “সড়কে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, বিআরটিএ, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে কয়েকটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষকে দায়ী করে নিরাপদ সড়ক পাওয়া কঠিন।”

নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় শাস্তি বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে, এসব মামলা হবে জামিন অযোগ্য। এছাড়া আইনে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মামলায় হত্যাকাণ্ডের ধারা যোগ করার সুযোগও রাখা হয়েছে।

আইনের এই কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। মালিকরাও শ্রমিকদের সমর্থন করছেন।

মৃণাল বলেন, নতুন আইন নিয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতারা দুই তরফেই চাপে রয়েছেন।

“একটা চাপ সরকারের পক্ষ থেকে আইন বাস্তবায়নের পক্ষ নেওয়া। আমরা সে অবস্থান নিতে চাই। আমাদের শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে, আইনের বিরুদ্ধে লাগাতার অন্দোলন-সংগ্রাম, ধর্মঘট দেওয়া কেন দেয়া হচ্ছে না।”

আইনের বিভিন্ন ধারাকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “পুলিশ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে ৩০২ ধারায় (হত্যার অভিযোগ) মামলা দেয়, তাহলে চট্টগ্রামে শ্রমিক বিস্ফোরণ হয়ে যাবে। আইনে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য ৩০২ ধারায় মামলা এবং ফাঁসি। আমাদের কথা হচ্ছে, এখানে ৩০৪ ধারায় মামলা দেওয়া হোক, তদন্তে ইচ্ছাকৃত প্রমাণ হলে সেটা ৩০২ ধারায় নেওয়া হোক।”

আবার পুলিশের তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলে এই পরিবহন শ্রমিক নেতা বলেন, “এখানে তদন্তের ভার এককভাবে পুলিশের উপর দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে যে অবস্থা সেখানে তদন্ত নির্ভুল হবে কি না, সেটাও আমার প্রশ্ন আছে।”

আইনে চালকদের অষ্টম শ্রেণি পাস বাধ্যতামূলক করার প্রতিবাদও জানান পরিবহন নেতারা।

মৃণাল বলেন, “যদি আমরা বলি অষ্টম শ্রেণি পাস যারা করনি, তারা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে না, তাহলে ধর্মঘট হয়ে যাবে। আমি যদি বলি, পঞ্চম শ্রেণি পাস যারা করনি, লাইসেন্স যাদের নাই, তারা গাড়িতে উঠবে না, তাহলে এমনিতে ধর্মঘট শুরু হয়ে যাবে। যে ধর্মঘট হবে সেটা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।”

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন কঠোর করাই সমাধান নয় বলে মনে করেন মৃণাল।

তিনি বলেন, “শ্রমিকেরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়, বিদেশে গেলেও শতভাগ আইন মেনে গাড়ি চালায়। সেখানে তারা কোনো অ্যাকসিডেন্ট করে না। তাহলে দেশে যান চলাচলে কী সঙ্কট আছে, তা বের করা জরুরি। সে সঙ্কট নিরূপণ না করে চালককে দোষারোপ করে নিরাপদ সড়কের এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে না।”

সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক জরিমানা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, “দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আইনে জরিমানার বিষয়টাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে এটা ঠিক আছে।

তবে কোনো ধরনের বিক্ষোভ, ধর্মঘটে না গিয়ে আইন নিয়ে আপত্তি থাকলে সেটা সরকারকে জানানোর আহবান জানান তিনি।

“যে আইন পাস হয়েছে এমন তো না যে পরিবর্তন করা যাবে না। আইনের যেখানে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হবে আমরা সেটা সরকারকে জানাব। ধর্মঘট কোনো সমাধান না।”

নতুন আইন পুরোপুরি প্রয়োগের আগে সবাইকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে বলে জানান ডিআইজি।

সড়কে শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে পুরো দায় গাড়িচালকদের নয় বলে স্বীকার করেন তিনি।

“কিছু বিদগ্ধ জনগণ, জ্ঞানীগুনী ব্যক্তিরা মনে করে, ড্রাইভারদের ধরে সাজা দিলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরত আসবে। আমি সেটা মনে করি না। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ড্রাইভাররা একক ভাবে দায়ী না। তবে পাবলিক পারসেপশন বলে একটা কথা আছে। এ পাবলিক পারসেপশন চলে গেছে ড্রাইভারদের বিপক্ষে, যেরকম পাবলিক পারসেপশন চলে গেছে ট্রাফিক পুলিশের বিপক্ষে।”

জনগণের ধারণা পরিবর্তনে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান ডিআইজি। আইন প্রয়োগে পুলিশ পরিবহন শ্রমিকদের উপর কোনো ধরনের হয়রানি করবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

“এ আইন ব্যবহারে আমাদেরকে বাধ্য করবেন না। আমরা চাই একটা মামলাও যাতে না হয়। সরকারের ইনকাম করে দেওয়ার জন্য পুলিশ বসে নাই। কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্স সরকারের রেভিনিউ কালেকশন করে দেবে। আমি মামলা করে সরকারকে দুই-পাঁচ হাজার টাকা ইনকাম করে দেব, এটা আমাদের উদ্দেশ্যে না। আমাদের উদ্দেশ্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরত আনা।”

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনার সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি কফিল আহমেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মো. মুছা, ট্রাক কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোজাফ্ফর হোসেন, সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুর আলম মঞ্জু, চট্টগ্রাম বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জহুর আহমেদ, চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক, কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির আবুল হাশেম, চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক, কভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুর রহমান