বাদলের মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের আবহ

বাংলাদেশ জাসদের নেতা সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2019, 11:12 AM
Updated : 7 Nov 2019, 11:12 AM

বৃহস্পতিবার ভোরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণা ইন্সটিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাসদ নেতা বাদল।

জাসদের একাংশের কার্যকরী সভাপতি বাদল ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধা টানা তিনবার চট্টগ্রামের বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসন থেকে জোটের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন।

বাদলের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন সত্যিকারের দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানকে হারাল। গণতন্ত্রের ভিত্তি হল সংসদ। দেশের পার্লামেন্টারি সিস্টেমকে সমৃদ্ধ করতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন।

“সংসদে দেওয়া বক্তব্যে তথ্য, তত্ত্ব ও উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি উপস্থাপনের ভিত্তি রচনা করতেন, যা মানুষের মর্মকে স্পর্শ করত।”

বাদলের মৃত্যু চট্টগ্রামের জন্য ‘এক বড় ক্ষতি’ উল্লেখ করে অনুপম সেন বলেন, চট্টগ্রামের দাবি দাওয়া তিনি সংসদে তুলে ধরতেন। শেষদিকে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের জন্য সোচ্চার ছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “কয়েক বছরের ছোট হলেও তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিল খুব। আমাদের সমসাময়িক সবাই চলে গেছে, আজ বাদলও চলে গেল। শুধু আমি রয়ে গেলাম।

“সে গণমানুষের নেতা ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই আন্দোলন সংগ্রামে সোচ্চার থাকত। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিল। আমি সাতবারের সাংসদ, আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা কয়েকজন পার্লামেন্টারিয়ানের মধ্যে বাদল একজন। সংসদে তার বক্তব্য ছিল বস্তুনিষ্ঠ, জোরালো ও যুক্তি নির্ভর।”

চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন বাদল।

মইন উদ্দিন খান বাদলকে ‘বীর চট্টলার গৌরব’ আখ্যায়িত করে মহিউদ্দিনপুত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “মনে হচ্ছে যেন আবারও পিতৃহারা হলাম। চট্টগ্রামের স্বার্থে, মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে কোথায় ছিলনা তার গর্জন?

“প্রথম তার সাথে আমার পরিচয় শৈশবে। এরশাদের দোর্দণ্ড শাসনের সময়, তৎকালীন পিজি হাসপাতাল, আজকের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের রাজবন্দীদের কক্ষে। আমার বাবার প্রিজন সেলের সহবন্দী ছিলেন। এরশাদের সাথে আপস করে মন্ত্রী হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিয়েছিলেন বন্দীজীবন।”

নওফেলকে বন্ধুপুত্র ও নিজের ভাতিজা পরিচয় দিতেন বাদল।

অতীতের স্মৃতি চারণ করে নওফেল বলেন, “রাজনৈতিক আলোচনা যে শুধুই পদবির আর ক্ষমতার রাজনীতি নয় এবং রাষ্ট্রনীতি, আদর্শ, উন্নয়ন, এসবই হচ্ছে রাজনীতির মূল আলোচনা, বারবার তার সান্নিধ্যে এসে তা অনুভব করেছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি।

“বাংলাদেশের রাজনীতি আরও একজন বিরল প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদকে হারাল, এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতীয় সংসদ আর জাতীয় রাজনীতি, হয়তো বা এই সিংহের গর্জন আর শুনবেনা, কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ, আদর্শিক রাজনীতির এই সিংহ পুরুষকে আজীবন স্মরণ করবেন। বেঁচে থাকবেন আমাদের প্রিয় মাঈনুদ্দিন খান বাদল, আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায়।”

চীনে অবস্থানরত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক বার্তায় সাংসদ বাদলের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন।

মেয়র নাছির বলেন, “তিনি ছিলেন একাত্তরের রনাঙ্গণের একজন বীর সেনানী। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের সাথে তিনি কখনও আপস করেননি। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রামে তার সোচ্চার কন্ঠ জাতি আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

“শুধু তাই নয় তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানও ছিলেন। পার্লামেন্টে গণমানুষের দাবি তিনি সব সময় তুলে ধরতেন। এমন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান ও রাজনীতিককে হারিয়ে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।”

বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনে গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু সুফিয়ান।

ভোটের মাঠে বাদলের প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, এই বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী রাজনীতিবিদের প্রয়ানে গভীর শোক প্রকাশ করছি।

“এ বছরের ডিসেম্বরর মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু না হলে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকারের কাছে দাবি অনতিবিলম্বে এই ব্রিজের কাজ শুরু করুন। উনার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।”

নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর জাসদনেতা বাদলের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী।

ওর্য়ার্কাস পার্টির চট্টগ্রাম জেলা সভাপিত আবু হানিফ এবং সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান অন্য এক বার্তায় শোক জানিয়েছেন।

শরীফ চৌহান বলেন, ষাটের দশক থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছেন। এই মুক্তিযোদ্ধার প্রয়ানে চট্টগ্রাম তার এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল।

এদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবী এবং সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা এক বার্তায় বাদলের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।