তাদের দাবি, তিন-চার মাস আগেই মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তাই বাড়তি দামেই তাদের কিনতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে টেকনাফ ও কক্সবাজারের আমদানিকারদের দায়ী করেন।
এরআগে রোব ও সোমবার খাতুনগঞ্জে অভিযানের সময়ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতকে তারা টেকনাফ ও কক্সবাজারের আমদানিকারক, বিক্রেতা ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
সেই সব অভিযোগ এবং পেঁয়াজ কেনার ইনভয়েস দেখে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বলছে, টেকনাফ ও কক্সবাজারের আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, কমিশন এজেন্ট এবং বিক্রেতারা চট্টগ্রামের আড়তদারদের সাথে যোগসাজোশে ৪২ টাকায় কেনা পেঁয়াজ চট্টগ্রামের পাইকারি বিক্রেতাদের ৯০ থেকে ১১০টায় বিক্রি করতে বাধ্য করছে।
এই তালিকার ১১ জনই টেকনাফ ও কক্সবাজারের।
ওই তালিকা অনুসারে অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে সোমবারই কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন।
তবে মঙ্গলবার এই তালিকার কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সেলিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের লোকজন আমদানিকারকদের পায়নি বলে জানিয়েছেন।
“আগামীকাল সেখানে গিয়ে আবার সিএন্ডএফ এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখতে বলেছি।”
কক্সাবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টেকনাফের ইউএনও আজ বদলি হয়ে চলে গেছেন। অন্য একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনি আগামীকাল দেখবেন।”
জেলা প্রশাসনের ওই তালিকা ধরে মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে টেকনাফের চারজন আমদানিকারকের মোবাইলে ফোন করা হয়।
এদের মধ্যে মম (মগ) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মাত্র দুই ট্রাক পণ্য এনেছি। সেগুলোও ঢাকা এবং শ্রীমঙ্গলে বিক্রি করেছি। চট্টগ্রামের বাজারে পেঁয়াজ দিইনি। আমি বড় আমদানিকারক না। কিভাবে আমার নাম আসে? এটা দুঃখজনক। এ ব্যবসা আর করব না।”
মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে জানিয়ে মম বলেন, “এসব পেঁয়াজ কিনতে হয় মিডিয়ার মাধ্যমে। সেগুলো আমরা চোখেও দেখি না। বার্মার প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার ভিতর থেকে পেঁয়াজ আসে। ট্রাকে করে আনার পর আবার বোটে (নৌকায়) তুলে আনতে হয়। ৪০ কেজির বস্তায় কমপক্ষে তিন কেজি নষ্ট হয়।
“মিয়ানমারে তিন-চার মাস আগেই দাম বেড়েছে। ৪২ টাকায় কেনার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা তার আগের দর। এরপর বন্দর খরচ, ওঠানামা আর বাড়তি ট্রাক ভাড়া মিলিয়ে কেজি প্রতি দাম হয় ৮০-৮২ টাকা। এরপর কেউ ৯০ টাকায় আর কেউ ৯৭ টাকায় বেচে।”
সজিব, জহির ও সাদ্দাম নামের অন্য তিন আমদানিকারকে ফোন করলে তারা রিসিভ করেননি।
পেঁয়াজ ব্যবসায় যুক্ত টেকনাফের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দাবি করেন, বর্তমানে মিয়ানমার থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয় মূল্য প্রায় ৬৮ টাকা।
আবদুল কাদের নামের তালিকায় থাকা এক সিএন্ডএফ এজেন্ট টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সিএন্ডএফের কর্মচারী। মাস গেলে ১৫ হাজার টাকা বেতন পাই।
“আমদানিকারক কত টাকায় পেঁয়াজ কেনেন বা বেচেন সেসব আমি কি করে জানব। রাজস্ব দিয়ে পেঁয়াজ ছাড় করানোই আমার কাজ। কাঁচামাল যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য রাত-দিন পরিশ্রম করতে হয়। দামের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”
এদিকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের দুই আমদানিকারককে পেঁয়াজের দামের কারসাজি ও মজুতদারির অভিযোগে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ ধরণের অভিযান সারাদেশে চলবে বলেও জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন।