সচিবের ভাই সেজে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি

চট্টগ্রামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি শ্বশুরের সম্পদের মামলা চালাতে গিয়ে আইনীজীকে বিয়ে করেন; পাশাপাশি সচিবের ভাই পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2019, 11:46 AM
Updated : 5 Nov 2019, 11:46 AM

গ্রেপ্তার মো. আজিজের (২৮) বাড়ি পটিয়ার মনসা উপজেলায় হলেও দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে নগরীর বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় থাকতেন তিনি।

সোমবার সন্ধ্যার পর ওই এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করে আজিজ এক আইনজীবীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জানিয়েছেন। এই স্ত্রীর নামে ঢাকার একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে তা সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমের স্ত্রীর বলে প্রচার করতেন তিনি।নিজেকে ওই সচিবের ভাই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন আজিজ।

“বন্দর, কাস্টমস, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুলিশের চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বের হয়ে আসে তার প্রতারণার অভিনব কৌশল।”    

আজিজকে গ্রেপ্তারের পর চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগে বাকলিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে।

মামলার বাদী নাহিম হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর নৈশপ্রহরীর কাজের পাশাপাশি ক্রিকেট খেলে সংসার চালান তিনি। আজিজও এক সময়ে ক্রিকেট খেলার সুবাধে তার সাথে পরিচয় হয়। তবে আজিজকে তিনি চিনতেন ডাক্তার হিসেবে।

২০১৬ সালে কাস্টমসে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে আজিজ তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন। তবে চাকরি দিতে না পারায় বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে সময় পার করতে থাকেন। গত বছর তাকে দুই লাখ টাকার চেক দিলেও ব্যাংকে গিয়ে তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা পাননি নাহিম।

বিভিন্ন সময়ে টাকা চাইতে বাসায় গেলে তার আইনজীবী স্ত্রীও তাকে ধমক দিয়ে মামলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাহিম।

ওসি নেজাম উদ্দিন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় নাহিম কল্পলোক এলাকায় আজিজের কাছ টাকা চাইতে গেলে তিনি বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে আজিজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

“আজিজকে আটকের পর সে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে এফসিপিএসে অধ্যয়নরত বলে জানান। তার আইনজীবী স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে, চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রথম স্ত্রীর তথ্য গোপন করে তাকে বিয়ে করেছেন।”

আজিজ তার প্রথম স্ত্রীর বাবার সম্পত্তি নিয়ে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ওই আইনজীবীর সাথে পরিচয় হয় এবং তাকে বিয়ে করেছেন বলে দ্বিতীয় স্ত্রীর জানিয়েছেন।

ওসি নেজাম বলেন, আজিজকে গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর বেশ কয়েকজন থানায় যোগাযোগ করেছেন, যাদের কাছ থেকে তিনি সচিবের ভাই পরিচয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাত করেছেন। এর মধ্যে এক মহিলাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেন।

“এছাড়াও সে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে পুলিশে ও বন্দরে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে বলেও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে।”

গ্রেপ্তার আজিজ বাকলিয়া থানায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পটিয়ার রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি পাশ করে আর পড়াশোনা করেননি। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলমকে তিনি না দেখলেও তার স্বজন পরিচয় দেন।

প্রথম স্ত্রীকে চকবাজারে আলাদা বাসায় রাখেন, আর দ্বিতীয় স্ত্রী আইনজীবী দিলরুবাকে নিয়ে কল্পলোক আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। 

চট্টগ্রামের পাশাপাশি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ঢাকার মতিঝিল শাখায় নিজের ও দ্বিতীয় স্ত্রী দিলরুবা আক্তারের নামে আলাদা অ্যাকাউন্ট করেছেন। সেগুলোতেও সে বিভিন্ন জনের সাথে লেনদেন করে থাকেন।

“মতিঝিলে দ্বিতীয় স্ত্রী দিলরুবার নামে পরিচালিত অ্যাকাউন্টটি সে সচিবের স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট বলে মানুষের কাছে দাবি করে টাকা নেয়।”

তার ব্যাংক হিসাবের লেনদেনগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওসি জানিয়েছেন।