২-৩ দিনে কমবে পেঁয়াজের দাম, বললেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

খুচরা পর্যায়ে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2019, 09:37 AM
Updated : 5 Nov 2019, 11:24 AM

পাশাপাশি কাগজ ছাড়া আমদানিকারকদের কাছ থেকে আর পেঁয়াজ না কেনার অঙ্গীকারও করেছেন তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আড়তদারদের সাথে সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

পেঁয়াজের বাজার তদারকি করতে একটি মনিটরিং টিম গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম সভায় অংশ নেন।

সভা শেষে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ বলেন, “২-৩ দিন পরই ক্রেতারা খুচরা পর্যায়ে ১০০ টাকার ভেতরে পেঁয়াজ কিনতে পারবে। আড়তদাররা যাতে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি করতে পারে এবং কাগজের মাধ্যমে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেজন্য আমরা আমদানিকারকদের সাথে কথা বলে উদ্যোগ নেব।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন বলেন, “ভোক্তা পর্যায়ে যেন দাম ১০০ টাকার নিচে থাকে সে ব্যবস্থা তারা নেবেন। এক সপ্তাহের মধ্যে এস আলম ও মেঘনা গ্রুপ পেঁয়াজ নিয়ে আসবে। সংকট আর থাকবে না। এসব পেঁয়াজ আসলে ৬০-৭০ টাকায় হয়তো নেমে আসবে।”

দেশে পেঁয়াজের কোনো মজুদ সঙ্কট নেই নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না। কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ যেসব স্থানে পেঁয়াজ আমদানি হয় সেখানকার জেলা প্রশাসন কাজ করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ মনিটরিং টিমও কাজ করছে। পাইকারি ও খুচরায় ডকুমেন্ট ছাড়া কোনো পেঁয়াজ বিক্রি করবে না বলে তারা অঙ্গীকার করেছেন।”

সেলিম হোসেন বলেন, “দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ উঠবে আর ভারতের পেঁয়াজও চলে আসবে। তখন দাম ৪০ টাকার নিচে নেমে যাবে। এ সময়ের মধ্যে যারা বড় ব্যবসা করতে চাইবে তারা ক্ষতির মুখে পড়বে।”

এর আগে সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, টেকনাফ ও কক্সবাজারের যেসব আমদানিকারকের কাছ থেকে তারা পেঁয়াজ কেনেন, তাদের সাথে আড়তদারদের পরিচয় নেই। মূলত ফড়িয়া বা এজেন্টের মাধ্যমেই তারা পেঁয়াজ কেনেন।

আমদানিকারক ও এজেন্টদের বেঁধে দেওয়া বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে ও বিক্রি করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।

সভায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “এখন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে বলে ধারণা করছি। ৪২ টাকায় কিনে যদি ৯৫ টাকায় বিক্রি করে তাহলে কেজিতে ৫৩ টাকা বেশি। শুধু আমদানিকারকরাই এভাবে ১৫৯ কোটি নিয়ে যাচ্ছে। এরপর খুচরায় আসতে আসতে এ অংক প্রায় ২১০ কোটি টাকা।”

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, তারা মূলত মোবাইলে এজেন্টেদের সঙ্গে কথা বলেই পেঁয়াজ নেন। তাদের কাছে পাকা কোনো কাগজ নেই। রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে ২০০ টনের মত পেঁয়াজ এসেছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজের আড়তদার মো. ইদ্রিচ বলেন, “মিয়ানমারের ব্যবসা মাসখানেক ধরে চালু হয়েছে। ইমপোর্টারকে চিনি না। সিএন্ডএফকে ধরলে জানা যাবে। আমরা এজেন্ট বা কর্মচারীকে টাকা দিই।

“স্টকে ১৫০ টন ছিল, গতকাল আসছে ৮-১০ ট্রাক। কয়েকদিন এগুলো বিক্রি করতে হবে। দুই-চারদিন পর থেকে খুচরায় ১০০ টাকায় যাতে আসে সে চেষ্টা করব। কক্সবাজারের ব্যবসায়ীদের বলে দেব ৮০-৮৫ টাকায় হলে মাল পাঠাও, না হলে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ পাঠানোর দরকার নেই। দেশের অন্য বাজারেও যেন একই দামে বিক্রি হয় সেটা আপনারা দেখবেন।”

সভায় কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “আপনারা কাগজ ছাড়া যে ব্যবসার কথা বলছেন সেটা তো তাহলে কালো ব্যবসা। এটা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা হতে পারে না।

“এই যে ২০০ কোটি টাকার বেশি, এ টাকা কার পকেটে গেল? এই টাকা তো সাধারণ ক্রেতার পকেট থেকে চলে গেল। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সেলিম হোসেন ব্যবসায়ীদেরকে বলেন, “কাগজ ছাড়া ব্যবসা করবেন না এটার কমিটমেন্ট দেন। টেকনাফের আমদানিকারক ও এজেন্টদের মধ্যে যারা কারসাজিতে আছেন তাদের তালিকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার ইউএনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

“আজ-কালের মধ্যে মজুদ পেঁয়াজ বিক্রি করুন। কাগজে যা আছে তার ভিত্তিতে বিক্রি করবেন। মোবাইল টিম যাবে। বিশেষ মনিটরিং টিম করা হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। পরশু থেকে বাজার স্থিতিশীল হবে এই কমিটমেন্ট দেন। কাগজও মনিটর করা হবে। যদি বানানো কাগজ দেন তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, “আপনারা কাগজপত্র ছাড়া মোবাইলে ব্যবসা করেছেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। কাগজের মাধ্যমে যখন ব্যবসা করা হবে তখন মনিটর করা যাবে, কত দামে কিনছেন।”

এরপর আড়তে থাকা পেঁয়াজ বিক্রি করতে চারদিন সময় চান ব্যবসায়ীরা।

জবাবে ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আপত্তি জানিয়ে বলেন, “চারদিন সময় অনেক বেশি। বেশি দামে যে পেঁয়াজ কিনেছেন তা কালকের মধ্যে বিক্রি শেষ করবেন। পরশু থেকে দেখব কত দামে কিনছেন, ন্যায্য দামে বিক্রি করতে হবে। এডিসির নেতৃত্বে মনিটরি টিম করে দেওয়া হবে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে অভিযান চলবে।”

এর আগে রোব ও সোমবার খাতুনগঞ্জে দুই দফা অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মোট ১৬ জন আমদানিকারক, এজেন্ট, ব্রোকার ও বিক্রেতার সন্ধান পায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে দ্বিগুণ থেকে প্রায় তিনগুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করলে ওই দোকানিদের আর পেঁয়াজ যোগান না দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল একটি চক্র।

অক্টোবরের শুরু থেকেই আমদানিকারকের বেঁধে দেয়া দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হওয়ার কথা বলছিলেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

এরপর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার তালিকা ধরে চট্টগ্রামে কয়েকজন আমদানিকারকের খোঁজ করলেও তারা চলতি বছর কোনো পেঁয়াজ আমদানি করেনি বলে জানতে পারে জেলা প্রশাসন।

প্রায় এক মাস পর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রণকারী কক্সবাজারভিত্তিক আমদানিকারকদের চিহ্নিত করল।