সড়ক, রেল- দুই সেতুই হবে কালুরঘাটে: কাদের

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট অংশে একটি রেল ও একটি সড়ক সেতু হবে বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2019, 01:46 PM
Updated : 27 Oct 2019, 01:46 PM

রোববার সকালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সড়ক ভবনে সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং পরে দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

সকালে আগ্রাবাদে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “কালুরঘাটে দুটি সেতু হবে। রেল সেতু করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সড়ক সেতু আমাদের মন্ত্রণালয় করবে।”

পরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় এ বিষয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই ঘোষণা সব বিভ্রান্তির নিরসন ঘটাবে। কালুরঘাট সেতুর জন্য জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি দীর্ঘদিনের। কাজেই আমাদের অংশটার কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সেই নির্দেশ দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের জন্য কিছু সুখবর আছে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য ইআরডিকে চিঠি দিয়েছি। শিগগির এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে, কানেকটিভিটির খুব দরকার। চট্টগ্রামের অগ্রযাত্রায় নতুন সম্ভাবনা মেট্রোরেল।

“কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক চার লেন হবে। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে সম্ভাব্যতার কাজ চলছে।”

সকালে সড়ক ভবনের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কের হাটহাজারী থেকে রাউজান পর্যন্ত অংশ চার লেনে উন্নীতকরণ, শাহ আমানত সেতুর ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম, চট্টগ্রাম কাপ্তাই আঞ্চলিক সড়কে পিসি গার্ডার সেতুসহ মোট ৫২৭ কোটি টাকা ব্যয়ের সাতটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সেতুমন্ত্রী।

চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের মাধ্যম এবং নগরীর সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগেরও অন্যতম সংযোগ কালুরঘাট সেতু।

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ৭০০ গজ দীর্ঘ রেল সেতুটি ১৯৫৮ সালে সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

৮৯ বছর বয়সী সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে কয়েক হাজার যানবাহন ও কয়েক জোড়া ট্রেন।

সেতুটি নগরী লাগোয়া বোয়ালখালী উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার লোক পারাপার হয়। 

চট্টগ্রাম শহর থেকে বোয়ালখালী উপজেলায় পৌঁছাতে যেখানে সময় লাগার কথা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট, সেখানে একমুখী এ সেতু দিয়ে চলাচলে সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা।

এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি রুটে চলাচল করে দুই জোড়া ট্রেন। দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফার্নেস ওয়েল আনা-নেওয়ার জন্যও ট্রেন চলে এই সেতু দিয়ে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালু হলে তারও পথ হবে এই সেতু।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে ট্রেন চলাচল সীমিত হয়ে পড়লে কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচলে চাপ বাড়ে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বিতীয় কর্ণফুলী সেতু ভেঙে গেলে কালুরঘাট সেতু হয়ে পড়ে নগরীর সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছয়টি উপজেলা ও কক্সবাজার, বান্দরবান জেলার যোগাযোগের অন্যতম রাস্তা।

স্থানীয়দের দাবি, ২০১০ সালে তৃতীয় শাহ আমানত সেতুর উদ্বোধনের আগ পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচলের কারণে সেতুটি আরও নাজুক হয়ে পড়ে।

২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় এ সেতুটি বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ করেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সেতুটিতে ছোটখাট সংস্কার কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়।

কালুরঘাটে রেল কাম সড়ক সেতুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’।