কালুরঘাটে সেতুর দাবিতে গণঅনশন করবে সিপিবি

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের সুষ্পষ্ট ঘোষণা না এলে গণ অনশন কর্মসুচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি- সিপিবি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2019, 12:34 PM
Updated : 20 Oct 2019, 12:34 PM

রোববার সেতুর দাবিতে চট্টগ্রামে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সদর দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচিতে এ ঘোষণা দেন সিপিবি নেতারা।

সিআরবি সাত রাস্তার মোড়ে সমাবেশে পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, “একটি ছোট কালুরঘাট সেতু নির্মাণের জন্য সরকার বলছে টাকা নেই। অথচ দেশে হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। সেখান থেকে লুটপাট হচ্ছে। আমরা সরকারকে জিজ্ঞেস করতে চাই- হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ না থাকায় কি নতুন কালুরঘাট সেতু হচ্ছে না?” 

সেতুর জন্য হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেতু আর মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি করবেন না। লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভাবুন।”

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয় ৭০০ গজ দীর্ঘ কালুরঘাট রেল সেতু। ১৯৫৮ সালে এ সেতুটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সেতুটি নগরী লাগোয়া বোয়ালখালী উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা।

এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার লোক পারাপার হয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে বোয়ালখালী উপজেলায় পৌঁছাতে যেখানে সময় লাগার কথা ৩০ থেকে ৪০ মিনিট, সেখানে একমুখী এ সেতু দিয়ে চলাচলে সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা।

কালুরঘাটে রেললাইনসহ সেতু নির্মাণের দাবিতে স্থানীয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।

চট্টগ্রামের যে এলাকায় কালুরঘাট সেতু সেটি সংসদীয় আসন চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী)। এ আসনের টানা তিন বারের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাসদ নেতা মইনুদ্দীন খান বাদল।

গত ২৬ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রবীণ এ সাংসদ সেতুর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী ডিসেম্বরে সংসদ থেকে পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছেন। সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনে তিনি জাসদ ছেড়ে আওয়ামী লীগেও যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন বিভিন্ন সময়ে।

সিপিবি নেতা অশোক বলেন, “আমাদের একজন এমপি আছেন মঈনউদ্দিন খান বাদল। তিনি একবার বলেন সেতু না হলে ডিসেম্বরে পদত্যাগ করবেন। আরেকবার বলেন সেতুর জন্য প্রয়োজনে নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন।

“আমরা এমপি সাহেবকে বলতে চাই- আপনার যা ইচ্ছে আপনি করেন। আমাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমরা একটা সেতু চাই। শুধু বলছি সেতু নিয়ে রাজনীতি করবেন না।”

গত ১৪ সেপ্টেম্বর সেতুর দাবিতে সেতুতে পদযাত্রা করে রেলভবন ঘেরাও কর্মসুচি দিয়েছিলে কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রামের নেতারা। এর অংশ হিসেবে রোববার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল সদর দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে দলটি।

সকালে নগরীর কদমতলী মোড়ে সমবেত হয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ভবনের দিকে লাল পতাকার মিছিল নিয়ে রওনা হয় দলের নেতাকর্মীরা। সিআরবি সাত রাস্তা মোড়ে পুলিশ বাধা দিয়ে কয়েকজনকে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করলে নেতাকর্মীরা সেখানে বসে পড়ে।

সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুন নবীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারশন পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কালুরঘাটে রেল সেতুর। সিপিবি জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সে আন্দোলনে সামিল হয়েছে।   

“মানুষ চায় সেতু। আর সরকার বানাতে চায় মেট্রো রেল। কারণ মেট্রো রেল মেগা প্রজেক্ট। সেখানে মেগা কমিশন খাওয়ার সুযোগ আছে।”

ডিসেম্বরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু নিয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে গণঅবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি গণঅনশন পালনেরও ঘোষণা দেন তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবি সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মছিদ্দৌলা, কানাই লাল দাশ, অমৃত বড়ুয়া, শেহাব উদ্দিন সেফু, যুব নেতা অনুপম বড়ুয়া।

সমাবেশ থেকে মৃণাল চৌধুরীর নেতৃত্বে সিপিবির একটি প্রতিনিধি দল পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাছির উদ্দিন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দেন।