চট্টগ্রামে দেবী বিদায় বিষাদের সুরে

আনন্দের সঙ্গে বিষাদের সুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাল চট্টগ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2019, 02:54 PM
Updated : 8 Oct 2019, 02:56 PM

বিজয়া দশমীতে ‘মা’ দুর্গাকে বিদায় জানাতে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, সদরঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীর এলাকায় ভিড় করতে শুরু করেন চট্টগ্রাম মহানগরী এবং এর আশেপাশের হাজারো হিন্দু নর-নারী।

প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিমা বিসর্জনের প্রধান স্থান ছিল পতেঙ্গা সৈকত। দুপুর থেকেই বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি শুরু হয় দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর উপলক্ষে।

ঢাকের বাদ্য-কাঁসর ঘণ্টা, ধর্মপ্রাণ নর-নারীর উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো সৈকত এলাকা। দেবী দুর্গাকে অশ্রুনয়নে বিদায় জানাতে আসা ভক্তকূলের মধ্যে বিষাদের সুরের মধ্যে বেজে ওঠে আগামীর আগমনী, আসছে বছরে আবারও পূজার প্রত্যাশায়।

হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী দুর্গা তার সন্তান-সন্ততি নিয়ে স্বর্গ থেকে বাবার বাড়িতে (মর্ত্য) নেমে আসেন এবং ভক্তকূল কর্তৃক পাঁচদিন পূজিত হয়ে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি পুনরায় কৈলাসে (স্বর্গে) ফিরে যান। 

কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বেলা ১২টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে সর্বজনীন ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে ১৩০টি পূজার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় পতেঙ্গা সৈকত এলাকায়।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি চন্দন তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এবারে প্রতিমা নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবারে ব্যক্তিগত, ঘট ও সার্বজনীন মিলিয়ে ২৭০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এবারে পতেঙ্গা সৈকতে চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৩০ টি মণ্ডপের প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে বলে জানান চন্দন তালুকদার।

বেলা ১২টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠান চলে। 

প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

চন্দন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাপণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সিটি মেয়র আজ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীসহ পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নছির উদ্দিন সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সুখী সুন্দর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও এর আশেপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিসর্জন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার পাশাপাশি অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়। পুলিশ ছঅড়াও র‌্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।

পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোন ধরনের গোলযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে নগরীর সদরঘাট এলাকার অভয়মিত্র ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কর্ণফুলী নদী তীরে নগরীর ৩০ টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় বলে পূজা কমিটির নেতারা জানান।

এছাড়া কালুরঘাট সেতু সংলগ্ন কর্ণফুলী নদী তীরে ২৫টি ম-পের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এর বাইরে নগরীর কাট্টলী বিচসহ বিভিন্ন এলাকার পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে।