ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, আনন্দময় শৈশব স্মৃতি এবং মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনের আহ্বানও উঠে এসেছে মণ্ডপগুলোর অঙ্গসজ্জায়। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তের বেশকিছু পূজা মণ্ডপ ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
কোতোয়ালী মোড় সংলগ্ন ষোড়শীকুঞ্জ পূজামণ্ডপে দেবী প্রতিমার পাশাপাশি আরও কয়েকটি প্রতিমায় তুলে ধরা হয়েছে শৈশব থেকে মায়ের যত্নে শিশুর বেড়ে ওঠার দৃশ্যচিত্র।
মায়ের যত্নে বেড়ে ওঠার পর সেই সন্তানই যখন বৃদ্ধ বয়সে খোঁজ রাখেনা তখন কেমন হতে পারে মায়ের জীবন, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। আর চিতায় মায়ের শেষ বিদায়ের দৃশ্যকল্পের সাথে জেমসের ‘মা’ গানের সঙ্গীতায়োজন আবেগী করে তোলে ভিড় ঠেলে পূজা দেখতে আসা সব বয়সী মানুষকে।
নগরীর বৃন্দাবন আঁখেড়া মণ্ডপের দেয়াল ‘বেচো না আমায় অর্থ দিয়ে, আমিও কারোর ঘরের মেয়ে’, ‘যৌতুকের চাপ যেন বয়ে না আনে সামাজিক অভিশাপ’, ‘লালসায় উত্তপ্ত চোখ শিশু ধর্ষণ বন্ধ হোক’, ‘নারী নির্যাতন নিপাত যাক, সকল নারী সম্মান পাক’ এমন সব স্লোগানে সাজানো।
“অহেতুক থিমের বাড়াবাড়ি না করে এরকম কোনো বার্তা দিলে সেটা ভালো।”
এই মণ্ডপে প্রতিমার পাশের তোরণে লেখা ‘আমি কন্যা, আমি মা, আমি নারী, প্রয়োজনে আমিই দুর্গা হতে পারি’।
জীবনের সবক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও তারাই সবথেকে বেশি বঞ্চিত। এই ধারণাকে উপজীব্য করে ‘নারীর স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ থিমে সাজানো হয়েছে দক্ষিণ নালাপাড়ার মণ্ডপ।
শিশু অবস্থা থেকে নারীর বেড়ে ওঠা এবং বড় হয়ে তার স্বপ্ন ও তা পূরণের ব্যবধান তুলে ধরা হয়েছে নানা আঙ্গিকে।
হাজারী লেইন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার পান্ডে বলেন, “এই কলি যুগে নারী নির্যাতন থেকে ১০ বছরের শিশুও রেহাই পাচ্ছে না। অথচ নারীগর্ভ থেকেই সব মানুষের জন্ম।
“ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগে নারীর প্রতি অবিচার এবং এসব নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দেবীকে আবাহন। আর সবশেষে মানুষরূপী অসুরের বিনাস করতে দেবীর মর্তে আগমন এমন থিমে সাজানো হয়েছে পুরো পরিবেশনা।”
নগরীর আগ্রাবাদ গোসাইলডাঙ্গার একতা গোষ্ঠীর পূজা এবার ১২৫ বছরে পড়ল।
রোববার সন্ধ্যায় এই মণ্ডপের সামনে ছিল হাজারখানেক দর্শনার্থীর ভিড়। শিশু কোলে বাবা-মারাও এসেছিলেন পূজায়। একতা গোষ্ঠীর এবারের থিম ‘মনুষ্যত্ব’।
শিশু সন্তানকে নিয়ে আসা সঞ্চিতা পাল বলেন, “অনেক লম্বা লাইন পেরিয়ে মণ্ডপে পৌঁছলাম ছেলেকে নিয়ে। এদের আয়োজনে ব্যতিক্রম কিছু থাকে। এবার আবহ সঙ্গীত ভালো হয়েছে।”
নগরবাসীর আরেক আকর্ষণ টেরিবাজার বাই লেইনের পূজা। প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে এখানে পূজা দেখতে ভিড় করেছিল দর্শনার্থীরা।
অতীতে গ্রামবাংলার শিশুদের আনন্দময় শৈশব এবং বর্তমানে মোবাইল ও প্রযুক্তি নির্ভরতায় বদলে যাওয়া শিশু জীবন নিয়ে সাজানো টেরি বাজারের ‘শৈশব স্মৃতি’ থিম।
এছাড়া নগরীর পাথরঘাটা, কুসুম কুমারী সিটি করপোরেশন স্কুল, দেওয়ানজী পুকুর পাড়, আসকার দিঘীর পাড়, গোয়ালপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর হিন্দু পাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ কাট্টলী, বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার মন্দির ও পাড়ার মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।