পূজার নিখুঁত নিরাপত্তায় ‘অনেক বিষয়ে’ নজর চট্টগ্রাম পুলিশের

এবারের দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকছে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও আসামের এনআরসি বিষয়কে মাথায় রেখে দুর্গাপূজায় চট্টগ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2019, 08:08 AM
Updated : 3 Oct 2019, 08:30 AM

যদিও পুলিশ বলছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এ উৎসবে হুমকি বা ঝুঁকির কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। তারপরও নিরাপত্তায় ব্যবস্থায় কোনো ধরনের কমতি রাখতে চায় না তারা। তাই এসব বিষয়কে মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে এ বছর নগরী ও জেলা মিলে মোট সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সংখ্যা এক হাজার ৭৭৭টি। যেগুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর ও জেলার পুলিশ কর্মকর্তারা।

শুক্রবার দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা। মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্গোৎসবে কোনো ধরনের ঝুঁকি কিংবা হুমকির খবর আমাদের কাছে নেই। তারপরও মানুষের মনে কোনো ধরনের শঙ্কা থাকলে তা দূর করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।”

একইভাবে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনাও জানিয়েছেন, মহানগরীর মতো জেলার পূজার নিরাপত্তায়ও বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে এবছর ২৫৭টি মণ্ডপে পূজা হবে। যার মধ্যে ১১৮টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ১১১টি গুরুত্বপূর্ণ ও ২৮টি সাধরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার মাহবুব বলেন, পূজার শুরু থেকে বিসর্জন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

“প্রতিটি পূজা কমিটিকে বলে দেওয়া হয়েছে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের জন্য। পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে তিনজন করে পোশাকী পুলিশ ও সাত-আটজন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকরা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে।

“সাধারণ সময়ে দুইটি থানায় একজন সহকারী কমিশনার দায়িত্বে থাকলেও, পূজার সময় নগরীর ১৬ থানায় ১৬ জন সহকারী কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের থানা এলাকায় নিরাপত্তা সমন্বয় করবে। এছাড়াও কয়েকটি মণ্ডপ মিলে একটি করে মোবাইল টিমও গঠন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কেউ বিরূপ কিছু পোস্ট দিয়ে উস্কানি দিলে তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের সাইবার টিমগুলো সতর্ক আছে, যাতে কেউ এ ধরনের পোস্ট দিতে না পারে।

“পূজা নিয়ে কেউ যেন ‍গুজব সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার চেষ্টা করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। কেউ এ ধরনের চেষ্টা করলে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলায় এক হাজার ৫২০টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে ৩৯৬টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৪৬২টি গুরুত্বপূর্ণ ও ৬৬২টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।    

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা দাবি করেছেন, জেলার কোথাও কোনো ধরনের হামলা কিংবা হুমকির শঙ্কা নেই। তারপরও পূজার নিরাপত্তায় রোহিঙ্গা সঙ্কট, আসামের এনআরসি ও বিভিন্ন এলাকার অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজোনো হয়েছে।

“চট্টগ্রাম জেলার নিরাপত্তায় প্রায় তিন হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তার মধ্যে দুই হাজার ৭০০ জন চট্টগ্রাম জেলার নিজস্ব ফোর্স ও ২৫০ জন চট্টগ্রাম রেঞ্জ থেকে আনা হয়েছে।

“এবছর প্রতিটি থানায় বই তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ওই থানা এলাকার পূজা মণ্ডপের ছবি, কমিটি প্রধানদের মোবাইল ফোন নম্বর, পাশাপাশি যাতায়াতের ম্যাপও করা হয়েছে। যাতে সহজে সেখানে পুলিশ যেতে পারে।”

নগরীর মতো জেলায়ও মণ্ডপের গুরুত্ব ভেদে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়াও জেলার আটটি সার্কেলের দায়িত্বরত আটজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং উত্তর ও দক্ষিণের দুইজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সার্বিক নিরাপত্তার তদারকিতে থাকার কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মিনা।

একজন করে পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে কয়েকটি পূজা মণ্ডপ ঘিরে একটি করে মোবাইল টিম ও গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম রাখা হয়েছে নিরাপত্তার দায়িত্বে।

মাদকবিরোধী অভিযান চলবে

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পূজায় কেউ মদ সেবন করে যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মণ্ডপে সেসব বিষয় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পূজার সময় নগরীতে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পাশাপাশি বৈধ মদের দোকানও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, “গ্রামের পূজাগুলোতে কেউ যেন মাদক সেবন করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা নজরদারি শুরু করেছি। কেউ মাদক সেবন করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পূজার সময় নম্বরবিহীন মোটর সাইকেলের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানোর কথা জানান পুলিশ সুপার।

যে কোনো অনাকাঙ্খিত ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে মণ্ডপগুলোতে বলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।