নিহত ও আহতরা সবাই এক পরিবারের সদস্য।
নিহত নজরুল ইসলাম ছোটন (৫৫) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
সোমবার সকাল ৮টায় ওই ঘটনার পর বেলা আড়াইটার দিকে নজরুল মারা যান।
আহতরা হলেন- নজরুলের মা মনোয়ারা বেগম (৭০), নজরুলের স্ত্রী জোবাইদা (৩৫), নজরুলের বোন সেলিনা কলি (৩২), নজরুলের দুই ছেলে আজবীর (১৩) ও এজাজ (৩)।
ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কে বি আমান আলী সড়কের বাদশা মিয়া চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকার হাজী মফিজুর রহমান আবাসিক এলাকার বেদার মিয়া চৌধুরী টাওয়ারের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।
বাড়ির মালিকের মেয়েজামাই মো. রফিক ভবনটির দেখাশোনা করেন।
সকাল ৮টায় এ ঘটনার পর বিকালে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে।
রফিক সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ৮টার পর দারোয়ানের ফোন পেয়ে এখানে আসি। তারপর আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই।
“আমি আসার আগেই তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।”
রফিক জানান, ওই বাসায় দুই ভাই তাদের পরিবার নিয়ে থাকতো। তাদের মধ্যে খালেকুজ্জামান অপু সকালে চাকরিতে চলে যান।
“ওই পরিবারের লোকজন বলছে, বাইরে থেকে আগুনের মতো কিছু একটা পড়েছে। তাদের ধারণা বজ্রপাত। ওই ঘরের কাঠের মূল দরজা এবং সিঁড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে।”
ওই ঘরের বাসিন্দা খালেকুজ্জামান অপুর স্ত্রী শারমিন সাংবাদিকদের বলেন, “সকাল ৮টার দিকে আমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দ পাই। ঘুম থেকে উঠে দেখি আগুন। দুই ছেলেকে নিয়ে দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে আসি।”
ওই ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটির দু’পাশে অন্য দুটি ফ্ল্যাট আছে। তবে ঘটনার সময় সে দুটি ফ্ল্যাটে কেউ ছিলেন না।
সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাটি একটু অন্যরকম। আমরা তদন্ত করে দেখছি।
“আগুনের ও শব্দের উৎস জানতে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, সিআইডি এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের ডেকেছি। বজ্রপাত না কি অন্য কিছু, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো আলামত পাইনি।”
সন্ধ্যায় ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মূল কাঠের দরজাটি ভেঙে পড়ে আছে। ঘরটিতে ঢুকতেই বাম পাশে ডাইনিং স্পেস, তার বায়ে ছোট রান্নাঘর এরপর একটি শয়ন কক্ষ। আর মূল দরজার ডান পাশে একটি ছোট কক্ষ এবং সবশেষে আরেকটি শোবার ঘর।
ডান পাশের শোবার ঘরটির জানালার কাঁচ ও থাই এলুমিনিয়ামের ফ্রেম ভেঙে পড়ে গেছে।
ওই ঘরে একটি খাট আছে। সেখানে অল্প কিছু জিনিসপত্র আধপোড়া অবস্থায় পড়ে আছে।
বাম পাশের শোবার ঘরটির মাটিতে একটি বিছানা পাতা। সেটিরও জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে গেছে। দেয়ালে পুড়ে যাওয়া ক্যালেন্ডার। আলনায় থাকা কাপড়ের মধ্যে অর্ধেক পুড়ে গেছে। বাকিগুলো অক্ষত।
রান্না ঘরের জানালার কাঁচ ভাঙা তবে লোহার ফ্রেম অবিকল আছে। রান্নার গ্যাসের চুলাটিও অক্ষত। চুলার ওপর একটি ঝকঝকে ছোট পাতিল বসানো।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘরটি দেখে আমাদের প্রাথমিক ধারণা হয়েছে, গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
“চুলায় ভাত রান্না হচ্ছিল। সেটা উথলে পড়ে চুলার আগুন হয়ত নিভে যায়। এতে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কেউ চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণ হয়। ঘরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকায় হয়ত তারা বেশি দগ্ধ হয়।”
সকালে আগুনে লাগলে স্থানীয়রা ওই বাসার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার নারায়ন ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অগ্নিদগ্ধ সবাইকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
“ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পরই নজরুল ইসলাম মারা যান। বাকিদের মধ্যে মনোয়ারা বেগমের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে।”