‘যুবলীগ নেতা’ পরিচয়ে ছিনতাই, চট্টগ্রামে ৪ জন গ্রেপ্তার

একসময় ছিনতাইকারী দলের সঙ্গে অটোরিকশা চালাতেন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারেও ছিলেন কয়েক মাস। জামিনে ছাড়া পেয়ে ছিনতাইয়ের নতুন কৌশল হিসেবে সেজেছেন ‘যুবলীগ নেতা’।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2019, 08:43 AM
Updated : 30 Sept 2019, 09:05 AM

চট্টগ্রামে ছিনতাইয়ে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, রিকশাযাত্রীদের কাছ থেকে ‘যুবলীগ নেতা’ পরিচয় দিয়ে টাকা, মোবাইল ফোন ছিনতাই করাই তাদের পেশা।

গ্রেপ্তাররা হলেন- নজরুল ইসলাম (৫০), গাজী মো. তমিজউদ্দিন (৪৮), মো. হাসান ওরফে হারুন (২২) ও মিঠুন নায়ক (২৬)। তাদের মধ্যে নজরুল চক্রটির নেতা এবং হাসান ও মিঠুন রিকশাচালক।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রোববার সন্ধ্যায় নগরীর লাভলেইন এলাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুইটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।

ওসি বলেন, “নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে ঘোরাঘুরি করে তারা। টার্গেট করা অন্য রিকশার যাত্রীদের নজরুল সালাম দিয়ে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়। পরে তার আহত কর্মীর চিকিৎসার কথা বলে টাকা দাবি করে। রিকশাযাত্রী টাকা দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ বের করলে টাকার পাশাপাশি মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়।”

গত এক মাসে নগরীর কোতোয়ালী, সদরঘাট থানাসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা শতাধিক ছিনতাই করেছে বলে জানান ওসি মহসিন।

নজরুলকে গ্রেপ্তারের পর খুলশী থানার জালালাবাদ এলাকায় তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই করা তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় বলেও জানান ওসি।

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বলেন, “নজরুল গ্রেপ্তার চারজনের নেতা। সে আগে ছিল ছিনতাইকারীদের সিএনজি অটোরিকশার চালক। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় সে পুলিশের টার্গেট হয়ে যায়। এ বছরের শুরুতে কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুই মাস কারাগারে ছিল নজরুল।

“জামিনে ছাড়া পেয়ে সে আবার ছিনতাইয়ে যুক্ত হয়। তবে আগের দলের সাথে না গিয়ে নিজেই দল তৈরি করে। ছিনতাইয়ের নতুন কৌশল হিসেবে নজরুল নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে থাকে।”

নজরুলের কাছ থেকে তথ্যের বরাতে পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, “পরিপাটি পোশাক পরা ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী রিকশাযাত্রীদের মূলত টার্গেট করে নজরুল। টার্গেট করা ব্যক্তির পিছু নিয়ে নির্জন স্থানে গেলে তাকে সালাম দেয় এবং নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে যাত্রীর সাথে কথা বলতে থাকে। পরে দলের অন্যরা ওই যাত্রীকে ধারালো অস্ত্র ধরে টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।”

নজরুল জানিয়েছেন, ইয়াবা আসক্ত হয়ে ছিনতাইকারীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। গ্রেপ্তার হয়ে দুই মাস ১১ দিন কারাগারে থেকে চারমাস আগে ছাড়া পান। এরপর দুই মাস ঝিনাইদহে বাড়িতে অবস্থান করে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন।

পাঁচলাইশ এলাকার স্থানীয় কিছু যুবলীগ নেতার সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়ে মিছিল-সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন দাবি করে নজরুল জানান, চট্টগ্রামে এসেও অতীতের অপরাধের কারণে কোনো মালিকের কাছ থেকে অটোরিকশা ভাড়া পেতেন না। তাই যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ছিনতাই শুরু করেন।

মাস দেড়েক আগে নাসিরাবাদ এলাকায় রিকশাচালক মিঠুন ও সানমার ওশান সিটির সামনে হাসানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাদেরকেও দলে ভিড়িয়ে নেন নজরুল। আর অটোরিকশা চালানোর সময় নজরুলের সাথে পরিচয় হয়েছিল তমিজউদ্দিনের। তমিজউদ্দিন বেকার হওয়ায় তাকে নিয়ে কয়েকটি ছিনতাই করেছিলেন।

গ্রেপ্তার মিঠুন জানিয়েছেন, মাস দেড়েক আগে নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের সামনে থেকে নজরুল তার রিকশায় যাত্রী হয়েছিলেন। কলেজ মোড় থেকে জিইসি এবং সেখান থেকে ফিরে গিয়ে দুইশ টাকা ভাড়া দিয়েছিলেন। অল্প দূরত্বে এত টাকা ভাড়া পেয়ে এরপর নজরুলের সাথে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া-আসা করতে থাকেন। প্রতিবার নজরুলের সাথে গেলে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হত বলে মিঠুন জানান।

মিঠুনের মতো হাসানকেও নজরুল একইভাবে তার দলে নিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।