জালিয়াত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা: ইসি শাহাদাত

এনআইডি জালিয়াতিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2019, 02:31 PM
Updated : 23 Sept 2019, 02:32 PM

সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাম্প্রতিক এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার কয়েকটি ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জড়িত কিনা জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, “যদি এরকম কেউ থেকে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা আমরা নেব।

“এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের নজরে আসেনি। যদি নজরে আসে কেউ বাদ পড়বে না, সবার বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নেব। আমাদের এখানে কর্মকর্তা যারা আছে, শুধু এখানে না, সারা দেশে এ গুরুত্বপূর্ণ সেবায় কোনো দুর্নীতি যদি হয় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট পাওয়ার কিছু ঘটনা আগেও ঘটেছিল। তখন সতর্কতা অবলম্বনের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক সঙ্গে অনেক ঘটনা ধরা পড়ার স্পষ্ট হয়, সেই সতর্কতায় কাজ হয়নি। এখন সবগুলো কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে।

ইসির পাশাপাশি চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের তিনটি পাসপোর্ট কার্যালয়সহ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা প্রায় দেড়শ পাসপোর্ট আবেদনপত্রের নথি সংগ্রহ করে দুদকও নেমেছে তার তদন্তে।

দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার পেছনে দুই নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সাতজনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে।

তদের প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখের নাম রয়েছে। লতিফ শেখ বর্তমানে পাবনার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

অন্যরা হলেন- ঢাকা এনআইডি প্রজেক্টের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাগর, একই শাখার সাবেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, চট্টগ্রামের পটিয়ার বড় উঠান ইউনিয়মের শাহানুর মিয়া, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী অপারেটর জনপ্রিয় বড়ুয়া (পটিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী রাসেল বড়ুয়ার চাচাত ভাই) ও চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন।

তাদের মধ্যে জয়নাল আবেদীন আগেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর ইসির আইডিইএ প্রকল্পের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট শাহানূর মিয়াকে সোমবার বিকালে ঢাকায় আটক করা হয়েছে।

ল্যাপটপ খোয়া যাওয়া বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দায়ভার নেবে কিনা এমন প্রশ্নে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমার জানা মতে, ১০ হাজারের অধিক ল্যাপটপ কিনেছিলাম। যখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়ে যায় মাঠপর্যায় থেকে সব ল্যাপটপ ফেরত চলে আসে।

“তখন অনেকগুলো ল্যাপটপ বিভিন্ন সরকারি অফিসে দিয়েছি, যেন কাজে লাগাতে পারে। আমার অত্যন্ত দুঃখিত, যদি একটা ঘটনাও ঘটে থাকে। সেটার জন্য নির্বাচন কমিশন অবশ্যই দায়ভার নেবে এবং আমরা অবশ্যই বের করে নেব কিভাবে হয়েছে।” 

ইতিমধ্যে যেসব রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছেন তাদের শনাক্ত করা ও বাদ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০১৭ সাল থেকে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে তাদের বায়োমেট্রিকের যে তথ্য আছে, সেটার সাথে আমরা তথ্যভাণ্ডারে ম্যাচ করি। তারপরেও সারাদেশের হালনাগাদের যে তথ্য আসবে সেটা পুরোটাকে রোহিঙ্গাদের তথ্যভাণ্ডারের সাথে ম্যাচ করব।

“যে নিয়মে তথ্যভাণ্ডারে আপলোড করি এর বাইরে কোনো তথ্য যদি আসে প্রয়োজনে আমরা সেগুলো ব্লক করে ফেলব। সেই ভোটারদের আলাদা করে তথ্য যাচাই করে রিলিজ করা হবে।”

২০১৭ সালের আগে যে রোহিঙ্গারা ভোটার হয়েছে তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ বাংলাদেশের নাগরিক নয় সেরকম কেউ যদি ভোটার হওয়ার জন্য আসে তাদের তথ্য আমাদের জানানো হলে অবশ্যই আমলে নেওয়া হবে।

“একটা ওয়ার্কশপ করা হবে, যেখানে বিশেষ অঞ্চলগুলোতে প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকবেন। পুলিশ, গোয়েন্দা, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, এনএসআইসহ সবাইকে নিয়ে। একটা টেকনিক্যাল ও অন্যটা নন টেকনিক্যাল পার্ট। দুটো নিয়েই ওয়ার্কশপ করব। যাতে রোহিঙ্গাবর্জিত একটি তালিকা করা যায়।”

নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, “২০১৭ সালের পরে হলে আমরা যাচাই করতে পারব। যাদের বায়োমেট্রিক আছে তাদের বের করা কোনো সমস্যা না। কিন্তু সমস্যা হলো ২০১৭ সালের আগে যেগুলো হয়েছে সেগুলো।

“প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্ত করব। আমার জানা মতে খুব বেশি নাই। চেষ্টা থাকবে যতখানি রোহিঙ্গামুক্ত করা যায়।”

অতীতে এ ধরণের ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে জিনিসটা নজরে এসেছে সেটার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে নীলক্ষেতেও কিছু আইডি কার্ড পেয়েছি। ব্যবস্থা নিয়েছি। এরমধ্যে অনেকে থানায় গিয়েছে, অনেকে চাকরি হারিয়েছে। সবসময় নজরে রাখি।”