তাদের গলার স্বর কমে গেছে: ফখরুল

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসতে থাকায় ‘সরকারের স্বর’ এখন অনেকটাই কমে গেছে মন্তব্য করে এসবের দায় নিয়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2019, 03:32 PM
Updated : 21 Sept 2019, 03:32 PM

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শনিবার দলের স্থায়ী বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “তাদের (সরকার) স্বরও কমে গেছে আজকাল। যেভাবে জোর গলায় কথা বলত, এখন তারা নিজেরাই ধরা পড়ে গেছে। আমাদের তো অপেক্ষা করতে হয় নাই। তাদের লোকেরাই সব ধরিয়ে দিচ্ছে, ধরা পড়ছে তারা- এখন যেন স্বরটা কমে আসছে।

“একটা কথা তাদের বলতে চাই, গলাবাজি না করে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছেন- এই কারণে পদত্যাগ করে দয়া করে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করে জনগণকে রেহাই দেন, জনগণকে স্বস্তি দেন।”

সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে জুয়ার আসরে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অভিযানে ঢাকায় যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাবেও অভিযান চালানো হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “গোটা দেশে এখন একটাই আলোচনা- সেটা হচ্ছে ক্যাসিনো, জুয়া। সারা দেশে বলা হচ্ছে যে, ঢাকার বাইরেও এই জুয়া চলছে। এই সরকারের আমলে এটা প্রচণ্ড রকমে বেড়ে গেছে। বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণটা হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই কোথাও।

“এখন ২৯ ডিসেম্বর যাদেরকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছে তাদেরকে বলার কিছু নেই, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারছে না। যেকারণে এই পরিস্থিতিগুলো অ্যারাইজ করেছে। না পারছে নিজের দল, না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, না অন্য কিছু, নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই সরকারের কোনো লেজিটিমেট রাইট নেই ক্ষমতায় টিকে থাকার। তারা সচেতনভাবে এটাকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, ব্যর্থ রাষ্ট্রের কারণেই কিন্তু সমস্ত অরগানগুলো ফেইল করে যাচ্ছে, ভেঙে পড়ছে, কাজ করছে না।”

খালেদার শারীরিক অবস্থা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা জানেন যে, গতকাল তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। সেখান থেকে বেরিয়ে তার বোন বলেছেন যে, তিনি (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত অসুস্থ, আগের চেয়ে অনেক বেশি অসুস্থ। উনি শুকিয়ে গেছেন, এখন নিজে খেতেও পারছেন না, তাকে খাইয়ে দিতে হচ্ছে।

“আমরা বার বার বলেছি, চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়া হোক, দিয়ে তিনি যেখানে ভালো চিকিৎসা করতে চাইবেন সেখানেই তিনি করবেন। সেখানে সরকার কোনো কথাই শুনছে না। আমরা উচ্চ আদালতে গিয়েছিলাম, সেটাকে (জামিন আবেদন) পূর্ণাঙ্গ কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এগুলোতে তার জামিন বিলম্বিত করাই হচ্ছে। জেনে-শুনে সরকার এটা করছে। উদ্দেশ্যটা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দূরে রাখা এবং একই সঙ্গে ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি চাই, আইনগতভাবে চাই, জামিনের মাধ্যমে চাই।”

উচ্চ আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া আবার শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।

ছাত্রদলের কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

টকশোতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার গ্রামের বাড়িতে হামলার নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল।

স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল ম্ঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।