‘ঢাকা-চট্টগ্রাম তেল পাইপলাইনে ক্ষতি মানুষ, পরিবেশ, অর্থের’

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপ লাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ প্রকল্পটি পুর্নবিবেচনার দাবি উঠেছে এক আলোচনা সভা থেকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2019, 01:38 PM
Updated : 21 Sept 2019, 01:38 PM

শনিবার চিটাগাং সিনিয়রস ক্লাবে ‘তেল পরিবহনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন: অর্থের অপচয় ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পরিবেশ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি, অতিরিক্ত ব্যয়, তেল পরিবহনে নিযুক্ত শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা আছে।

‘অ্যালায়েন্স ফর কনসার্ন সিটিজেন’র উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনার মিডিয়া পার্টনার ছিল ভোরের কাগজ।

বৈঠকের শুরুতেই আলোচনার সঞ্চালক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “সরকার বিভিন্ন সময় অনেক বড় প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যে শেষ পর্যন্ত এসব প্রকল্প মানুষের কল্যাণে আসে না।

“তেল পরিবহনে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারের একটি অপচয়মূলক প্রকল্প হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করছি। এ প্রকল্পের ফলে কোনো গোষ্ঠী লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ দেশের মানুষ, পরিবেশ ও বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ।”

তিনি বলেন, “এতে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। পাইপ লাইন ছিদ্র করে চুরি করা, নাশকতা সৃষ্টি চেষ্টা করা, তেল নিঃসরিত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি, জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি সরকারের নজরে আনা জরুরি।”

তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বন্দর-বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, দেশের ভূমির গঠন নরম এবং ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা।

“দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সবসময় স্থিতিশীল থাকে না। তাই অভ্যন্তরীণ নাশকতার শঙ্কাও আছে। অন্যদিকে পাইপলাইন লিকেজ হলে পানির স্তরে এবং মাটির ভেতরে তেল ছড়িয়ে পড়বে।”

দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং মানুষের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে তা অপূরণীয়। এর ওপর আছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। স্বাস্থ্যগত, পরিবেশগত, অর্থ, নিরাপত্তাসহ সার্বিক দিক থেকে তেল পরিবহনে পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের পক্ষে মতামত দেওয়া যায় না।”

সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক চট্টগ্রামের সভাপতি আকতার কবির চৌধুরী বলেন, “যে দেশে বালিশ-পর্দার দাম নিয়ে কেলেঙ্কারি হয়, সে দেশে এত বড় মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে সংশয় রয়েছে।

“সম্ভাব্য ব্যয়ে প্রতি কিলোমিটার পাইপলাইন বসাতে খরচ হবে নয় কোটি টাকা। এটা নিশ্চিতভাবে অর্থের অপচয়। আশুগঞ্জ-হরিপুর পাইপলাইনে অসংখ্য ছিদ্র করে তেল চুরি হয়েছে, আগুন লেগে ও লিকেজ হয়ে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম দীর্ঘ এই পাইপলাইনে এমনটি ঘটলে তা অনেক বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।”

পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস’র সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, সার্বিকভাবে জনকল্যাণকর নয়, এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নৌপরিবহন ব্যবস্থাকে যথাযথ ও পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো এবং নৌপথে তেল পরিবহন ঝুঁকিমুক্ত করার ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে।

“স্টেক হোল্ডার, বিশেষজ্ঞের মতামত উপেক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা শংকায় রেখে, পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি, অর্থের অপচয় করে কেন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে?”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবু নোমান বলেন, ভবিষ্যতে উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ হবে- ভূমি। এই প্রকল্পে যে বিশাল জমি চলে যাবে, পরে উন্নয়ন কাজ করার জন্য ভূমি পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শেখ মো. ইছা মিয়া বলেন, “প্রকল্পটির অনেকগুলো ঝুঁকি আছে। তাই এটি পুনর্বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

আলোচনায় অংশ নেন যমুনা অয়েল ট্যাঙ্কার মালিক প্রতিনিধি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদত হোসেন, পদ্মা অয়েল ট্যাংকার ওনার্স রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইয়াকুব চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, পদ্মা অয়েল ট্যাংকার ওনার্স রিপ্রেজেন্টটেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী শামীম প্রমুখ।

‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর।

প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০৫ কিলোমিটার তেল পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে। এতে ব্যয় দুই ধরা হয়েছে হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।

২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই প্রকল্পে ৪৩৬ দশমিক ৮৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ৭৫৪ দশমিক ৬৮ একর হুকুম দখল করতে হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন।