বে টার্মিনাল নিয়ে সিদ্ধান্ত যে কোনো সময়: প্রতিমন্ত্রী

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল নির্মাণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যে কোনো মুহূর্তে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2019, 02:11 PM
Updated : 4 Sept 2019, 02:31 PM

বুধবার বন্দর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটউটে নবগঠিত বন্দর উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

সভার সিদ্ধান্ত বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আলোচনা হয়েছে, বে টার্মিনাল যেন দ্রুত হয়। বে টার্মিনালের ক্ষেত্রে সরকার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। যে কোনো মুহূর্তে আমরা এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি।

“যত শিঘ্রই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু করা যায় সে ব্যাপারে স্টেক হোল্ডারদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।”

সভা শেষে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বে টার্মিনালের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শুরুর কথা বলেছেন তারা।

“অন্তত এর ট্রাক টার্মিনালটির কাজ শুরু করে যেন সেটি কখন ব্যবহার করা যাবে সে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের খেঁজুরতলার বিপরীত থেকে কাট্টলী পর্যন্ত অংশে পলি জমে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চর সৃষ্টি হয়েছে। এই চরে প্রস্তাবিত বে টার্মিনালকে বলা হচ্ছে ‘ভবিষ্যতের চট্টগ্রাম বন্দর’।

এর জন্য প্রাথমিকভাবে মোট ৮৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারের (রিক্লেইম) পর বে টার্মিনালের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে মোট ২৫০০ একরে।

এই চর ও উপকূলের মাঝামাঝি প্রায় ৮০০ মিটার প্রশস্ত জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি হয়েছে। এই পথের গভীরতা ৭ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত।

খনন করলে এই পথে ১০ থেকে ১২ মিটার ড্রাফট (জাহাজের পানিতে নিমজ্জিত অংশের গভীরতা) ও ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ চালানো সম্ভব।

২০১৬ সালের ১৭ অগাস্ট বে টার্মিনাল নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে চট্টগ্রাম বন্দর।

জার্মান প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কে এস কনসালটেন্টস লিমিটেড যৌথভাবে এই সমীক্ষা পরিচালনা করে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে বে টার্মিনালের মূল অবকাঠামোন নির্মাণে ব্যয় হবে ২ বিলিয়ন ডলার। তবে যন্ত্রপাতি, পরিচালন খরচসহ ধাপে ধাপে দীর্ঘ মেয়াদে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।

বে টার্মিনালের জমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও টার্মিনালটি নির্মাণ ও পরিচালনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।

‘বাস্তবায়ন না হলে সিদ্ধান্ত কেন?’

নতুন উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় মোট আলোচ্য বিষয় ছিল ২৪টি।

বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আগে বিভিন্ন উপদেষ্টা কমিটির সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সভা শেষে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “যে সমস্ত সিদ্ধান্ত হয় সেগুলো বাস্তবায়ন হয় না কেন, সেটা আমরা বলেছি। আজ যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো তিনমাসের মধ্যে বাস্তবায়ন চাই।”

প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “পূর্বের সিদ্ধান্ত কেন বাস্তবায়ন হয়নি। যদি বাস্তবায়নই করতে না পারি তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কেন। ভবিষ্যতে এগুলো খুব সর্তকর্তার সাথে দেখা হবে।” 

সভায় অবৈধভাবে চলাচলকারী বাল্কহেড বন্ধে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

কর্ণফুলী ড্রেজিং কবে নাগাদ শেষ হবে এবং এর প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কর্ণফুলী আমাদের লাইফ লাইন। এটাকে ব্যবহার উপযোগী রাখতে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমরা নিচ্ছি।

“যে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা দরকার তা আমরা করছি। ড্রেজিং এমন একটা জিনিস, সিলটেশন হয়...। এটা চলমান প্রক্রিয়া, থেমে থাকবে না।”

সভায় বর্হিনোঙরে জাহাজের অপেক্ষায় থাকার সময় বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বহির্নোঙরে এখনো নাভিঃশ্বাস হয়নি। আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। নানা কারণে বন্দরে কনজেশন হচ্ছে। এই সেক্টরটা অনেক সময় প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি অনেক সময় বাধা হয়ে থাকে। জটিলতা তৈরি হয়।

“নিলামযোগ্য কন্টেইনার সরানো আরো স্মুদ করা দরকার। স্ক্যানার সরকার অনুমোদন করে দিয়েছে। এগুলো চলে আসলে আরো গতিশীল হবে।”

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ‘অলস’ অর্থ সরকারি তহবিলে নেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অলস অর্থ তো অলসই। অলস অর্থকে সচল করতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”

সভার শুরুতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নের সঙ্গে শুধু সারা দেশের উন্নয়ন নয় বরং পুরো অঞ্চলের উন্নতি নির্ভর করে। সরকারও এই বন্দরের উন্নয়নে পতেঙ্গা, লালদিয়া ও বে টার্মিনাল নির্মাণে কাজ শুরু করেছে।

উপদেষ্টা কমিটির সভায় জাতীয় সংসদের হুইপ সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী, বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চন্দনাইশের সাংসদ নজরুল ইসলাম, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।