দণ্ডিত ‘নুরুল’ ব্রাজিলে, নামের মিলে নির্দোষ ‘নুরুল’ জেলে

নামের মিলে আটক করে আনার কিছুদিন পর পুলিশ জানতে পারল, যে নুরুল আবছারকে তারা ধরেছেন, তিনি আসামি নুরুল আবছার নন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2019, 04:10 PM
Updated : 2 Sept 2019, 04:10 PM

প্রতারণার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি নুরুল আবছার দেশের বাইরে পলাতক; এরমধ্যে একই এলাকায় থাকা একই নামের আরেক ব্যক্তিকে ধরে আনে পুলিশ।

পরে ‘ভুল’ বুঝতে পেরে নির্দোষ নুরুল আবছারের মুক্তির জন্য আদালতে আবেদনও করেছে। সেই আবেদনে সোমবার চট্টগ্রামের পঞ্চম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মো. জহির উদ্দিন ভুলে আটক হওয়া ব্যক্তিকে মুক্তির নির্দেশ দেন।

পাশাপাশি প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার এবং এ ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখার আদেশ দেন।

‘ভুলবশত’ গ্রেপ্তার হওয়া ‍নুরুল আবছার সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মধ্যম গারাংগিয়া এলাকার মৃত নুরুন্নবীর ছেলে।

আর দণ্ডিত নুরুল আবছার সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের গারাংগিয়া হাতিয়ারপুল এলাকার নুরুল কবীর আলমের ছেলে।

দণ্ডিত আসামি নুরুল আবছার নগরীতে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতেন। তিনি ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ নিয়েছিলেন।

ওই ঋণ পরিশোধে ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল তারিখের একটি চেক দেন। সেই চেক প্রত্যাখ্যাত (ডিসঅনার) হলে ব্র্যাক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে চেক প্রতারণার মামলা করেন।

পঞ্চম যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্র্যাক ব্যাংকের করা চেক প্রতারণার একটি মামলায় আসামি নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ২৩ এপ্রিল রায় দেন আদালত।

“এতে আসামিকে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং এক লাখ ৩৮ হাজার ১৮১ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় সাজা পরোয়ানা পাঠানো হয়।”

এরপর থানার এক এএসআই গত ১৮ অগাস্ট পলাতক নুরুল আবছার মনে করে একই নামের অন্য নুরুল আবছারকে গ্রেপ্তার করেন বলে জানান বিশ্বজিৎ বড়ুয়া।  

পরদিন ১৯ অগাস্ট তাকে আদালতে হাজির করলে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে সাতকানিয়া থানার এএসআই জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই নুরুল আবছারই একই এলাকা গারাংগিয়ার বাসিন্দা। স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে যখন নুরুল আবছারের বাড়িতে যাই তখন তার বাবার নাম নুরুল কবীর আলম কি না জানতে চাইলে সে বলে- হ্যাঁ।

“এসময় স্থানীয় মেম্বার, নুরুল আবছারের স্ত্রী ও বোন এবং এক বয়স্ক প্রতিবেশী ছিলেন। তারা কেউই বলেননি যে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কিছুদিন পরে এক ব্যক্তি ফোন করে জানায়, এই নুরুল আবছার সেই নুরুল আবছার নয়।”

এএসআই বলেন, “এরপর নুরুল আবছারের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র যোগাড় করি। তারপর ভুলবশত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মুক্তি দিতে আদালতে আবেদন করি।”

সহকারী পিপি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, “আদালতে শুনানিতে আমরা বলেছি ভুলবশত কোনো আসামি কারাগারে থাকতে পারে না। তাকে মুক্তি দেওয়া হোক।

“নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন।”

পাশাপাশি আদালাত দণ্ডিত নুরুল আবছারকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া ওই ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের কোনো গাফিলতি আছে কি না তা তদন্ত করতে এবং গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এএসআই জহিরুল ইসলাম বলেন,  “খোঁজ নিয়ে জেনেছি দণ্ডিত নুরুল আবছার এখন ব্রাজিলে আছেন।”