সাত জেলায় ‘কয়েকশ চুরি-ডাকাতিতে’ জড়িত তারা

চট্টগ্রামের এক হোটেল থেকে গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ১১ জন দেশের সাতটি জেলায় দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ‘কয়েকশ’ চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 01:12 PM
Updated : 25 August 2019, 01:13 PM

রোববার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান বলেন, “এরা একটি আন্তঃবিভাগীয় চক্র। তাদের কাছ থেকে দুটি এলজি ও চারটি কার্তুজ এবং দোকানের শাটার ভাঙার সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।”

শনিবার রাতে লালদিঘীর পাড় এলাকার ‘তুনার্র্জ্জিন’ আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ থেকে ওই ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এরা হলেন- মো. হানিফ ওরফে হাতপোড়া হানিফ (৩৮), কামাল হোসেন (২৮), লিয়াকত হোসেন (২৪), আকরাম ওরফে আরমান ওরফে সাগর (২৩), মো. তৌফিক (২৬), মো. মিজান (২৫০, মাসুম (২৬), নয়ন মল্লিক (২২), মিলন (২৫), জামাল উদ্দিন (৩০) ও কামাল ওরফে ভুষি কামাল (৩২)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জেলায় জেলায় চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করেছে’ বলে পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, “এদের দলনেতা হানিফ। তার অধীনে ৯-১০টি ছোট গ্রুপে মোট ৫০ জন সদস্য আছে। অন্য জেলাগুলোতে আমরা এ বিষয়ে তথ্য জানিয়েছি।”

পুলিশ বলছে, এই চক্রটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাতের বেলা শাটার ভেঙে চুরির সঙ্গে জড়িত। বাধা পেলে ব্যবহার করার জন্য তারা সঙ্গে অস্ত্র রাখে।

এই চক্রের সদস্যরাই গত জুন ও ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম শহরের দুটি দোকান থেকে যথাক্রমে পৌনে দুই লাখ ও ১২ লাখ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে যায় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বড় চুরি হলে হানিফ একাধিক ছোট গ্রুপকে একত্রিত করে। তারপর চুরি করে। কোনো একটি গ্রুপের সদস্যরা গ্রেপ্তার হলে অন্য গ্রুপ দিয়ে হানিফ চুরি করায়। সেই চুরির টাকায় সদস্যদের পরিবার ও মামলার খরচ চালায়।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হানিফ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শো-রুম, বড় কাপড়ের বা মুদি দোকান, বিপণন অফিসসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান ‘টার্গেট’ করতেন।

এরপর চক্রের আরেকজন সেই প্রতিষ্ঠানটি ‘রেকি’ করে আসতেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হত কতজন এই চুরিতে অংশ নেবে।

পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন,  “হানিফ ফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলত। চক্রের সদস্যদের আসা-যাওয়ার জন্য টাকা পাঠানো হত। চুরিতে সফল হতে না পারলেও সদস্যদের খরচ দিত দলনেতা।”

কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মহসীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দোকানের শাটার ছোট হলে তারা তালা ভেঙে প্রবেশ করে। আর শাটার বড় আকারের হলে কৌশলে দুই পাশে টেনে ফাঁকা করে একজন বা দুই জন দোকানে প্রবেশ করে টাকা, মোবাইল, কম্পিউটার ও দামি জিনিস নিয়ে বেরিয়ে আসে।

“পুরো কাজে তাদের ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে। চট্টগ্রাম শহরে একটি ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়ে তারা জড়ো হয়েছিল। তাদের সাথে অস্ত্র ছিল। বাধা পেলে তারা অস্ত্র ব্যবহার করত।”

আইন অনুসারে সংঘবদ্ধ চক্র অস্ত্রসহ মালামাল ও টাকা ছিনিয়ে নিলে বা চুরি করলে তা ডাকাতি হিসেবে গণ্য হয়।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার সবার স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা জেলায়। তাদের মধ্যে হানিফ বর্তমানে চট্টগ্রামের হালিশহর থানার নয়াবাজার ধোপাপাড়া এলাকায় থাকতেন। আর কামাল থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার দরবার গলি এলাকায়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, “গ্রেপ্তারদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। পুরো চক্রের সব সদস্যকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালানো হবে।”