গত ১৩ অগাস্ট রাতে চট্টগ্রামে মদপানে তিন যুবকের মৃত্যুর পর তদন্তে নেমে চক্রটির সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ভেজাল মদ তৈরির কারবারে সরাসরি জড়িত একজনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- নাছিম উদ্দিন (২৩), মো. ইকরামুল হক (৩২), স্বপন পাল (৫১) ও মো. ইমরান ফয়সাল (২১), জাহেদুর রহমান আরজু (৩০)। তাদের মধ্যে নাছিম ভেজাল মদ তৈরির সাথে সরাসরি যুক্ত বলে পুলিশের দাবি।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত বুধবার রাতে আকবর শাহ থানার মালিপাড়া এলাকায় মদপানে তিনজনের মৃত্যু ঘটনায় হওয়া অপমৃত্যুর মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলে ভেজাল মদ বিক্রির চক্রটির সন্ধান পাওয়া যায়।
ওই ঘটনায় বিশ্বজিতের ভাই টিটু মল্লিক একটি অপমৃত্যু মামলা করেন আকবর শাহ থানায়।
পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক জানান, “ঘটনার পর আমরা টিটু মল্লিকের কাছ থেকে জানতে পারি গত ১৩ অগাস্ট মোটর সাইকেলে করে আসা দুই যুবকের কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় সে ও তার ভাই বিশ্বজিত একটি বিদেশি মদের বোতল কিনেছিল। ওই মদপানেই অসুস্থ হয় বিশ্বজিত ও তার তিন বন্ধু।
“বুধবার বিকালে আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম মন্দিরের দক্ষিণ পাশের রেল গেইট থেকে একটি বিদেশি মদের বোতলসহ নাছিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে টিটু ও বিশ্বজিতের কাছে মদ বিক্রি ও ভেজাল মদ তৈরির বিষয়টি স্বীকার করে।”
“শহরের বিভিন্ন হোটেল ও বার থেকে তারা বিদেশি মদের বোতলগুলো সংগ্রহ করে। এরপর পানির সাথে স্পিরিট, সুগন্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ভেজাল মদ তৈরি করে।
“নগরীর পুরাতন গীর্জা এলাকা থেকে স্পিরিট, ঢাকা থেকে বোতলের কর্ক, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করে মদ তৈরির পর বোতলজাত করে। এজন্য তারা আন্দরকিল্লা ও পাহাড়তলী এলাকার দুইটি প্রেস থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের লেবেলে তৈরি করে নেয়।”
নাছিমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুরাতন গীর্জা এলাকা থেকে স্পিরিট বিক্রেতা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ইকরামুল হক এবং মদের লেবেল তৈরির অভিযোগে আন্দরকিল্লা ও পাহাড়তলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্বপন পাল, ইমরান ফয়সাল ও জাহেদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান উপ-কমিশনার ফারুক।
অনুমতি না থাকলেও ইকরামুল হক তার নিজের হোমিওপ্যাথির দোকানে স্পিরিট বিক্রি বিক্রি করতেন। দোকান থেকে ৪২ লিটার স্পিরিট উদ্ধার করা হয়েছে।
“নাছিম আরও জানিয়েছে, তিন-চারজন মিলে কয়েক বছর ধরে তারা ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রির বিষয়টিও স্বীকার করেছে। প্রতি বোতল মদ তারা দেড় থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করে।”
চক্রের অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে জানিয়েছেন ওসি।
নাছিমকে গ্রেপ্তারের পর পাহাড়তলী থানার আগ্রাপাড়া এলাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি বিদেশি মদের বোতল, বোতলের লেবেল ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে মদপানে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া অপমৃত্যু মামলটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি মোস্তাফিজুর।