চলন্ত বাসে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’, চালক ও সহকারী গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে মাঝরাতে চলন্ত বাসে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে চালক ও তার সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2019, 04:39 PM
Updated : 11 August 2019, 04:39 PM

শনিবার গভীর রাতে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন বাসের চালক রবিউল আউয়াল (২২) ও সহকারী মো. হৃদয় (২৪)।

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার চির্কা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ‍হৃদয় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট জাইল্যা পাড়ায় থাকেন।

আর চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. হাবিবের ছেলে রবিউল আউয়াল থাকেন বন্দরনগরীর কালুরঘাট বাস টার্মিনাল এলাকায়।

তাদের বিরুদ্ধে রোববার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন বাসযাত্রী ওই তরুণী। স্বামীর সঙ্গে নগরীর বাকলিয়া থানার কালামিয়া বাজার এলাকায় তিনি থাকেন। তার বাবার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়ায়।

ওসি মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই তরুণী শনিবার দুপুরে আনোয়ারায় বাবার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাতে ফিরছিলেন বাকলিয়ার বাসায়।

“রাত ১১টার দিকে শাহ আমানত সেতু এলাকায় পৌঁছে তিনি বুঝতে পারেন, বাসার চাবি তিনি বাড়িতে ফেলে এসেছেন। এ কারণে তিনি বাকলিয়ায় না গিয়ে দেওয়ানহাট মিস্ত্রিপাড়ায় চাচাতো বোনের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন।”

দেওয়ানহাট যাওয়ার জন্য শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বহদ্দারহাটে যান ওই তরুণী। সেখান থেকে ১ নম্বর রুটের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে জিইসি মোড়ে পৌঁছালে অন্য যাত্রীরা সবাই নেমে পড়েন।

ওই নারীর বরাত দিয়ে ওসি মহসিন বলেন, “তথন বাসটি আর যাবে কিনা জানতে চাইলে চালক ও সহকারী প্রশ্ন করেন- তিনি কোথায় যাবেন? দেওয়ানহাট যাবেন জানালে সহকারী হৃদয় বাসের চালক রবিউলকে বলে-‘চল ওকে নামায় দিয়ে আসি’।”

কিন্তু বাসটি লালখান বাজার মোড়ে এসে দেওয়ানহাটের দিকে না গিয়ে বাঁয়ে মোড় নিয়ে কাজীর দেউরির দিকে রওনা হয়। সন্দেহ হওয়ায় ওই নারী জানতে চান বাস কোথায় যাচ্ছে।

চালক-সহকারী তখন ধমক দিয়ে তাকে গাড়িতে বসে থাকতে বলে। ওই তরুণী বাস থামাতে বললেও তারা গাড়ি চালিয়ে যেতে থাকে।

ওসি বলেন, “বাস চিটাগাং ক্লাবের সামনে পৌঁছালে হৃদয় একহাতে ওই নারীর মুখ চেপে ধরে। অন্য হাতে ওড়না ধরে টান দিলে তিনি সিট থেকে পড়ে যান।”

মামলার এজাহারে ওই নারী বলেছেন- “আমি চিৎকার করতে থাকি। গাড়ির হেলপার (হৃদয়) ওড়না দিয়ে আমার গলা চেপে ধরে আর ধর্ষণের চেষ্টা করে।”

এ সময় তার চিৎকারে বাসের পেছনে থাকা গরুবাহী একটি ট্রাকের লোকজনের সন্দেহ হয়। তারা বাসটিকে ধাওয়া করতে শুরু করেন।

মামলার এজাহারে ওই নারী বলেন, “আমি বাসের দরজা দিয়ে লাফ দিতে চাইলে হেলপারকে উদ্দেশ্য করে ড্রাইভার বলে- ‘মেইয়াটারে ধর শালা’। হেলপার তখন আমাকে ধরে রাখে। ড্রাইভার তখন কাজীর দেউরীর দিকে গাড়ি চালাতে থাকে।”

কাজীর দেউড়ি মোড়ে গরুবাহী ট্রাকটির চালক সামনে এগিয়ে গিয়ে বাসের পথরোধ করে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও দোকানদাররাও এগিয়ে আসেন।

সে সময় সেখানে উপস্থিত আনোয়ার নামের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কাজীর দেউড়ি মোড়ে একটি ট্রাক এসে বাসের পথরোধ করেছে দেখে তারা এগিয়ে যান।

“তখন গরুর ট্রাকে থাকা লোকজন বলে- ভাইয়া গাড়ির মেয়েটি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। লোকজন তখন বাসের চালক আর সহকারীকে আটকে ফেলে।”

কিছুক্ষণ পর টহল পুলিশের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশও যায়। চালক ও সহকারীকে আটক করে নিয়ে যায় তারা।

ওসি বলেন, “মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে গ্রেপ্তার দুজন। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাসটিও পুলিশ জব্দ করেছে।”