পানির দাম দ্বিগুণ বাড়াতে চায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

আবাসিকে প্রায় দ্বিগুণ করে পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2019, 08:50 AM
Updated : 9 August 2019, 08:50 AM

আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা এবং বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করতে চায় ওয়াসা।

আইন অনুসারে বছরে শুধু একবার ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও চলতি বছর ছয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাব করল চট্টগ্রাম ওয়াসা।

পানি উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি এবং শোধনাগার প্রকল্পগুলোর ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য দাম বৃদ্ধির এই প্রস্তাব বলে জানিয়েছেন ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

শুক্রবার বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন হলেও এটাকে ‘প্রস্তাব’ বলতে নারাজ ওয়াসার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা।

তারা বলছেন, সরকারের কাছে খরচের এই হিসাব তারা তুলে ধরছেন। দাম বাড়ানো হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫২ তম বোর্ড সভার এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভার এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জনস্বার্থ বিবেচনায় তা অনুমোদন না দিতে মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এর আগে ২৮ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসা।

তখন আবাসিকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) ৯ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট ২৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে বোর্ড সভা শেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, “এটা দাম বাড়ানোর প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হলো কতগুলো প্রকল্প আমরা শেষ করেছি। এই প্রকল্পগুলো আমরা ঋণ নিয়ে করি। চেষ্টা করছি সব মানুষকে পানি দিতে। এসব ঋণ ও সুদ আমাদের পরিশোধ করতে হয়।

“পানি নদী থেকে নিয়ে শোধন করে পাইপ লাইনে সরবরাহ করতে খরচ হয়। অনেক আগে থেকেই কম রেটে আমরা পানি দিতাম। আবাসিকে প্রায় ১৬ টাকা খরচ পড়ে এবং কর্মাশিয়ালে ৪০ টাকা খরচ পড়ে।”

নজরুল বলেন, “সরকারকে জানালাম যে খরচ বেড়ে গেছে। কোনো প্রস্তাবনা নেই। সরকার সিদ্ধান্ত নিবে।”

প্রায় একই সুরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, “বড় প্রকল্পের খরচ তো পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালের পর সুদসহ শোধ করতে হবে। তখন খরচ আরও বাড়বে। সবদিক চিন্তা করে, জনগণের উপর যাতে চাপ না হয় সেভাবেই করতে হচ্ছে।

“আমাদের বাড়ানোর ক্ষমতা আছে শুধু বছরে ৫ শতাংশ। আমরা সরকারকে খরচের বিষয়টা জানাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানকে সক্ষম রাখতে হলে এ পর্যায়ে আসতে হবে। পানি যে মূল্যবান, সেটাও মানুষকে জানতে হবে।”

নদীর পানি ঘোলা হওয়ায় তা শোধনে খরচ বেড়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়াসার বোর্ড সভায় এ ধরনের প্রস্তাব অনুমোদন অন্যায় ও অযৌক্তিক। আশা করি, মন্ত্রণালয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এটা অনুমোদন করবে না।”

তিনি বলেন, “যে প্রকল্পগুলোর অজুহাত দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর বাজেট বারবার বাড়ানো হয়েছে। এমনকি এসব প্রকল্পে অনিয়মের কথাও শোনা গেছে। কারও অদক্ষতার জন্য যদি প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বাড়ে, সেটার দায় তো জনগণের ঘাড়ে চাপানো যায় না।”

নাজের বলেন, “মোট পানি উৎপাদনের যে হিসাব ওয়াসার পক্ষ থেকে দেয়া হয় তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই প্রতি ইউনিটে যে খরচের হিসাব দেখানো হচ্ছে, সেখানেও গোঁজামিল আছে।”

আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার মোট গ্রাহক ৭১ হাজার ১৩০। এরমধ্যে ৬৪ হাজার ১৯টি আবাসিক সংযোগ এবং বাকি ৭ হাজার ১১১টি অনাবাসিক সংযোগ।

চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার দাবি অনুসারে এরমধ্যে তারা ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে।

সে হিসেবে বন্দর নগরীর বাসিন্দারা চাহিদা অনুসারে পানি সরবরাহ পান না। পাশাপাশি সরবরাহ লাইন প্রতিস্থাপনে সারা বছর চলতে থাকা নগরী জুড়ে ওয়াসার খোড়াখুড়ির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।