প্রতিবার চুরির পর মাজারে আশ্রয়

একসময় বস্তিতে থাকলেও তেতাল্লিশ বছর বয়সী ছকিনা বেগম এখন থাকেন ছয়তলা ভবনের ভাড়া বাসায়। তবে তার বেশভূষা একজন গৃহকর্মীর মতো। আসলে তার গৃহকর্মী পরিচয়টি একটি ছদ্মবেশ। এর আড়ালে তিনি মূলত বাসাবাড়িতে চুরি করেন।

উত্তম সেন গুপ্ত চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2019, 07:36 AM
Updated : 5 August 2019, 07:36 AM

ছকিনা বেগম সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে, প্রতিবারই চুরির পর তিনি কোনো না কোনো মাজারে কয়েকদিন কাটিয়ে আবার কাজ নেন নতুন কোনো বাসায়। তারপর যথারীতি চুরি এবং মাজারে আত্মগোপন।  

এক বাসা থেকে মোবাইল ফোন, টাকা চুরির পর পুলিশের জালে ধরা পড়া ছকিনা বেগমের জবানীতেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।

পুলিশ মহিউদ্দিন সেলিম (৩২) নামে জহুর হকার্স মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকেও গ্রেপ্তার করেছে, যিনি ছকিনার চুরি করা মোবাইল ফোনের ক্রেতা।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নগরীর পাথরঘাটার নজু মিয়া লেইনের এক বাসায় গত বৃহস্পতিবার কাজ নেন ছকিনা। শুক্রবার প্রথম দিন কাজে গিয়েই ওই বাসা থেকে ৩৫ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোন চুরি করে পালান তিনি।

“ওই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর শনিবার রাতে পাথরঘাটা আশরাফ আলী রোডের তোয়ালে ফ্যাক্টরি এলাকা থেকে ছকিনা ও তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেনার অভিযোগে মহিউদ্দিন সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

মহিউদ্দিনের কাছ থেকে ওই বাসা থেকে চুরি করা মোবাইল ফোন দুটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ওসি মহসিন।

পুলিশের কাছে ছকিনা বেগমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বাড়ি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে। প্রায় ১০ বছর আগে চট্টগ্রামে এসে ইট ভাঙ্গার কাজ নেন। আম বাগান এলাকায় ইট ভাঙ্গার কাজ করতেন, থাকতেন ঝাউতলায়। তবে কম পরিশ্রমে বেশি লাভের আশায় ইট ভাঙ্গার কাজ ছেড়ে বেছে নেন বাসায় চুরি করার কাজ।

আগে ছকিনা বস্তিতে থাকলেও বর্তমানে আশরাফ আলী রোডের একটি ছয়তলা ভবনে বাসা নিয়ে একাই থাকেন।

ছকিনা জানিয়েছেন, ঝাউতলা এলাকায় ‘আম্বিয়ার মা’ বলে পরিচিত এক নারীর সঙ্গে সাবলেট থাকতেন তিনি। ওই নারীর বুদ্ধিতেই চুরিতে জড়িয়ে পড়েন। তবে সেই ‘আম্বিয়ার মা’ এখন আর বেঁচে নেই।

সাত থেকে আট বছর ধরে বাসাবাড়িতে ছুরি করছেন ছকিনা বেগম। বিভিন্ন বাসায় কাজে যোগ দিয়ে মোবাইল, টাকা পয়সা নিয়ে চম্পট দেন তিনি। প্রথম দিন সুযোগ না পেলে দুই-তিনদিনের মধ্যেই চুরির কাজটি সেরে ফেলেন।

এরপর চুরি করা জিনিসপত্র বাসায় রেখে চলে যান কোনো না কোনো মাজারে। সেখানে দুই একদিন অবস্থান করে আবার ফিরে আসেন নগরীতে; কাজ নেন নতুন কোনো বাসায়। আর চুরির মালামাল বিক্রি করেন সুবিধামতো সময়ে।

এভাবে অন্তত ৫০টি বাসায় চুরি করলেও আগে কখনও ধরা পড়েননি তিনি।

চুরির অভিযোগে এক গৃহকর্মী গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে রোববার কতোয়ালী থানায় আসেন ইয়াকূব নগরের বাসিন্দা এক গৃহবধূ।

ছকিনাকে শনাক্ত করে তিনি জানান, গত নভেম্বর মাসে তার বাসায় কাজ নিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই তার আইফোন নিয়ে পালিয়েছিলেন ছকিনা।

ওসি মহসিন বলেন, “ছকিনা কোতোয়ালী থানা এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে কাজ নিয়ে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি অন্য কোনো থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কিনা।”

ওসি জানান, আগে ছকিনা নিজেই রেল স্টেশন এলাকায় চুরি করা মোবাইল ফোন বিক্রি করলেও কয়েক বছর ধরে মহিউদ্দিন সেলিম তার ফোনগুলো কিনছিলেন।

মহিউদ্দিনের প্রতিবেশী ছকিনা। ফলে ছকিনার বাসায় গিয়েই তিনি মোবাইল ফোন কিনে নিতেন বলে জানিয়েছেন ওসি মহিসিন।