চট্টগ্রামে ‘গুজব’ বন্ধে মাইকিং পুলিশের

সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও গত কয়েকদিনে ‘গুজব’ ছড়িয়ে গণপিটুনির ঘটনায় রটনাকারীদের পুলিশের হাতে সোপর্দে জনগণকে সচেতন করতে মাইকিং করে প্রচার শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2019, 04:16 PM
Updated : 23 July 2019, 04:16 PM

মঙ্গলবার থেকে  ‘ছেলেধরা গুজব’ নিয়ে নগরীর কোতোয়ালী ও কর্ণফুলী থানার ঘনবসতিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা, পাথরঘাটা, জামালখান, আন্দরকিল্লা, সিআরবি বয়লার কলোনী, জামতলা বস্তি, স্টেশন রোডে মাইকিং করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।

মাইকে বলা হচ্ছে, “সন্দেহের জেরে কাউকে আঘাত করে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না এবং নিজেও বিপদে পড়বেন না।”

সারাদেশের মতো সম্প্রতি চট্টগ্রামে হাটহাজারীসহ কয়েকটি উপজেলা এবং নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। গত কয়েক দিনে এসব এলাকায় অন্তত ১০ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছে।

এরমধ্যে গত দুইদিনে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়ায় ছেলে ধরা সন্দেহে নারীসহ ৬ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আর গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এখন পর্যযন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে একজন। 

চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  “কেউ যেন গুজব রটিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আজকে (মঙ্গলবার) লিখিত নির্দেশনা পেয়েছি।

“পাশাপাশি আইজি স্যারও আজকে বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছেন।”

বিভিন্ন থানার ওসিদেরও সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নুরে আলম মিনা বলেন,  “যারা গুজব ছড়িয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।”

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন,  “বাঁশখালীতে গণপিটুনির ঘটনায় আমরা ছয় জনকে এজাহার নামীয় আসামি করে মামলা নিয়েছি।”

ছেলেধরা সন্দেহে সোমবার সাতকানিয়ায় মানসিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় তার স্বজনদের মাধ্যমে মামলা করার কথা জানান নুরে আলম মিনা।

মামলায় ৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের গুজব বিরোধী বিভিন্ন তৎপরতরতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গ্রামে অনেকেই সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তাই গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে অ্যাসেমব্লিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং জনপ্রতিনিধি, গ্রাম ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে বলেছি।“    

নগর পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,  “পদ্মা সেতুর মতো সুন্দর বিষয়কে জড়িয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

৯৯৯ নম্বরের পাশাপাশি ০১৭৬৯৬৯১১৬২ অথবা ০৩১৬৩০৩৭৫ নম্বরে যে কোনো তথ্য জানানোর জন্য নগরবাসীকে আহ্বানও জানাচ্ছে পুলিশ।

কোতোয়ালী থানার ওসি মো. মহসিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিভিন্ন মার্কেট, মন্দির ও মসজিদেও  সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে ।

কর্ণফূলী উপজেলার শিকলবাহা, শাহ মিরপুর ও উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ছেলে ধরা গুজবে কান না দিতে জনগণকে সচেতন হতে আহ্বান করে এখানকার থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ বলেন, “আজকে থানা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে চারটি সিএনজি অটো রিকশার মাধ্যমে আমরা প্রচারণা শুরু করেছি। আগামীকাল থেকে (বুধবার) থানার বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে প্রচারণা ও লিফলেট বিলি করা হবে।”

পদ্মা সেতুর জন্য 'রক্ত ও মাথা' প্রয়োজন বলে ফেইসবুকে গুজব ছড়ানো হয় কিছুদিন আগে। এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইতোমধ্যে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।