শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ যানজটের জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার উন্নয়ন কাজ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং বন্দরে ট্রেইলর, ট্রাক কর্ভাভ্যানের প্রবেশের বিকল্প রাস্তা না থাকাকে দায়ী করছেন।
তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য প্রস্তাবিত রিং রোড দ্রুত নির্মাণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম শহরের লাইফ লাইন খ্যাত এয়ারপোর্ট-আগ্রাবাদ-লালখান বাজার-বহদ্দারহাট সড়কের যানজটের তীব্রতা কমে আসবে এবং বন্দরের কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যতে যাতে যানজট না হয় সেজন্য বন্দরের কিছু পরিকল্পনার কথাও তিনি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।
সাম্প্রতিক সময়ে টানা বর্ষণের ফলে প্রায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম মহানগরীর মূল সড়ক হিসেবে পরিচিত বিমানবন্দরমুখী সড়ক ও পতেঙ্গমুখী সড়কের বিভিন্ন অংশে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
এতে ঢাকাসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক রুটের বিমানযাত্রী এবং হজযাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়েও ফ্লাইট ধরতে না পারার পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে বসে থাকার ভোগান্তি তাদের সইতে হচ্ছে।
শহর থেকে বিমানবন্দরমুখী সড়কের নিমতলা, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড মোড়, সিমেন্ট ক্রসিং, বারিক বিল্ডিং, বন্দরটিলা এলাকায় যানজট ছিল তীব্র। এজন্য জলাবদ্ধতা, সড়কের বেহাল দশা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ এবং বন্দরে ঢোকার জন্য ট্রাক-ট্রেইলরের দীর্ঘ সারিকেই দায়ী করা হয় মূলত।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে বন্দর চেয়ারম্যান জুলফিকার আজিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিদিন গড়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেড় থেকে দুই হাজার ট্রেলার ও পাঁচ থেকে ছয় হাজার ট্রাক-কভার্ড ভ্যান বন্দরে প্রবেশ করে এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে চলে যায়।
“বন্দরে ঘূর্ণিঝড় ফনি পরবর্তী সময়ে পাঁচ হাজার ছয়শ কন্টেইনার পণ্যের সাথে কার্গোও ডেলিভারি দেওয়া হয়। রমজানে একদিনে চার হাজার ৮০০ কন্টেইনার পণ্য ডেলিভারি হলেও সেসময় বন্দরের বাইরে তীব্র যানজট হয়নি।’’
তিনি বলেন, সপ্তাহের সোম থেকে বৃহস্পতিবার চারদিন বন্দর থেকে গড়ে চার হাজার টিইইউএস কন্টেইনার ডেলিভারি নিলেও শুক্র, শনি ও রোববারে এ সংখ্যা দুই থেকে তিন হাজারে নেমে আসে। আমদানিকারকরা সপ্তাহের সাতদিন গড়ে স্বাভাবিক সময়ের মতো আমদানি করা পণ্য ও কার্গো ডেলিভারি নিলে বন্দর সংলগ্ন এলাকায় যানবাহনের হার স্বাভাবিক থাকবে।
রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বন্দরের বাইরের যানজট নিরসনে প্রস্তাবিত আগ্রাবাদ এক্সেস রোড-বড়পুল-আনন্দ বাজার-ইপিজেড এবং জিইসি-সাগরিকা বেড়িবাঁধ সড়ক দুটি দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি মন্তব্য করে বলেন, রিং রোড দুটি হলে বন্দরের পাশের সড়কের ওপরে যানজট কমবে।
যানজট নিরসনে তিনি নিমতলা-অলংকার-আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার মন্তব্য করে বলেন, এ দুই সড়কের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের উৎপাদনশীলতা ও শহরের যানজট নিরসন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত।
এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনের জন্য সকল সরকারি সংস্থার সম্মিলিত কার্যক্রম জরুরি মন্তব্য করে বলেন, “সিডিএ, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একসাথে কাজ করতে হবে। সমন্বয়ই হল সমস্যা। মাঠে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে বেশি করে কার্যকর হতে হবে যানজট নিরসনের জন্য।”
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করে দিতে পারেন উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, “ইতিমধ্যে টোল রোড যেন বন্দরের আওতায় দিয়ে দেয় সেজন্য বলা হয়েছে। বিমানবন্দরমুখী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সদরঘাট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নদীপথে ওয়াটার বাস চালু করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের মধ্যে সেটি চালু হবে।”
এছাড়া বে টার্মিনাল দ্রুত নির্মাণ করে সেখানে পণ্য খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হলে এবং নতুন ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ হলে যানজটের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করেন বন্দর চেয়ারম্যান।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিমানবন্দরমুখী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য বন্দর এলাকায় কোনো সমস্যা হবেনা। বিশেষ করে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের কাজে সমস্যা হবে না এবং বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্নিত হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।