এইচএসসি: যে কারণে চট্টগ্রামে পাস কম

ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের পাশাপাশি মফস্বল এলাকায় খারাপ ফলাফলের কারণে এবার অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার কম হয়েছে বলে মনে করছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2019, 01:41 PM
Updated : 17 July 2019, 02:35 PM

দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

অন্যান্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মতো চট্টগ্রামে এবার পাসের হার বাড়লেও আগের বছরের চেয়ে খুব একটা হেরফের হয়নি।

চট্টগ্রামে এ বছর পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা সাধারণ শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে পাসের হার শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর বোর্ডে বিজ্ঞান শাখায় ফলাফল আগের বছরের চেয়ে ভালো হলেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় খারাপ হয়েছে।

এর জন্য তারা ইংরজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে খারাপ ফলাফলকে দায়ী করেছেন। 

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সার্বিক বিবেচনায় চট্টগ্রাম বোর্ডের ফলাফল গতবছরের চেয়ে তেমন হেরফের হয়নি। বিজ্ঞান বিভাগের চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার সাত শতাংশ বাড়লেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাথায় তা কমেছে তিন থেকে চার শতাংশ করে।

“বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে ভালো করলেও ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই দুইটিতে খারাপ করেছে।”

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, আইসিটিতে এবছর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ পাস করলেও মানবিকে ৭৪ দশমিক ২০ ও ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৮৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।

এছাড়া ইংরেজি বিষয়ে মানবিক বিভাগের ৬৬ দশমিক ৩৭, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৮০ দশমিক ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।

অবশ্যিক এ বিষয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন ৯৭ দশমিক ০৭ শতাংশ পরীক্ষার্থী।

এদিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল এবছর অনেকটা মহানগর কেন্দ্রীক হয়েছে। মহানগরের পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীরা খারাপ ফলাফল করায় বোর্ডের পাসের হার অন্য বোর্ডগুলোর তুলনায় কম বলে মনে করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান ।

শিক্ষা বোর্ডের তথ্য মতে, এবছর চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় পাসের হার গতবারের চেয়ে প্রায় চার শতাংশ কমে হয়েছে ৫৫ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা গতবছর ছিল ৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।

কক্সাবাজারের ফলাফলে বেশি হেরফের হয়েছে। জেলাটিতে এবছর পাসের হার কমেছে গতবছরের চেয়ে সাত শতাংশের বেশি। এবছর এই জেলা থেকে পাস করেছেন ৫৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা গতবছর ছিল ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

রাঙামাটিতে গতবারের ৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ পাসের হার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। বান্দরবানে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ, গতবার ছিল ৬২ দশমিক ৩১ শতাংশ।

তবে খাগড়াছড়িতে পাসের হার বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এবছর এ পার্বত্য জেলাটি থেকে পাস করেছেন ৪৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী; গত বছর ছিল ৩৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া দুই হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরের দুই হাজার ৫১৯ জন, যা মোট জিপিএ-৫ এর ৮৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরে বিভিন্ন উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ২৪১ জন।

এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে ৫৬, রাঙামাটি থেকে আট, বান্দরবান থেকে ২১ ও খাগড়াছড়ি থেকে ১৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

বেশি জিপিএ-৫ পাওয়া নয়টি কলেজই মহানগরীর

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পাওয়া ১০টি কলেজের মধ্যে নয়টি কলেজই চট্টগ্রাম মহানগরীর। আর অন্যটি পটিয়ার।

এবছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে সরকারি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। বন্দরনগরীর এ কলেজ থেকে ৮৭৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৮৬৬ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৫৫ জন।

এছাড়া মহানগরীর সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ৫৩৪, সরকারি সিটি কলেজের ৩২১, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের ২৫০, সরকারি মহিলা কলেজের ১৭৩, সরকারি কমার্স কলেজের ১৫৭, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯৩, ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

আর পটিয়া সরকারি কলেজ থেকে ৬১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।