চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার ১৪টিতেই বন্যার দুর্দশা

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু, হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পানি বেড়ে চট্টগ্রাম জেলার ১৪টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2019, 10:46 AM
Updated : 15 July 2019, 12:48 PM

জেলার ১৫টি উপজেলার মধ্যে শুধু মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্য ১৩ উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এসব উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, হাটহাজারীসহ কয়েকটি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভূমি ধসের আশঙ্কায়।

৬ জুলাই থেকে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে এই বৃষ্টি চলছে শনিবার পর্যন্ত।

এরমধ্যে চট্টগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের বিভিন্ন উপজেলার সাথে যুক্ত কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীতে পাহাড়ি ঢলের পানিও বাড়তে থাকে। এসব নদীর সাথে যুক্ত খালগুলোতেও পানি বেড়ে তলিয়ে যায় বিভিন্ন লোকালয়।

পানি বেড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া। উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সোনাকানিয়া (আংশিক) ছাড়া বাকি সব ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পৌরসভাতেও পানি।

“১৭টি ইউনিয়েনর মধ্যে ১৬টিতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। সাঙ্গু নদীর পানি বেড়েছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারি বৃষ্টি। ইউনিয়নগুলোর বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।”

দুর্গতদের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্র ও শনিবার প্রায় দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪৫ টন চাল ও এক লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে ইউএনও মোবারক জানান।

উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীর তিনশর মতো পরিবার দুর্দশায় বলে জানিয়েছেন ইউএনও মোমেনা আক্তার।

তিনি বলেন, পুকুরিয়া, শিলকূপ, কালিপুর ও পুঁইছড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে, পানি উঠছে, বন্ধ হলে আবার নেমে যাচ্ছে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে পানিবন্দি মানুষের পরিমাণ কম বলে দাবি করেন তিনি। এখানকার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ড উপজেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

উপজেলাটির সদর এলাকার বিভিন্ন ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সদরের মুরাদপুর ইউনিয়নহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

“তবে কোনো এলাকায় পানি ঘণ্টা দেড়েকের বেশি স্থায়ী হয় না। এছাড়া উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।”

উত্তরের উপজেলাগুলোর মধ্যে ফটিকছড়িতে হালদা নদীর ঢলের পানিতে বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, উপজেলার সদরসহ ২০টি ইউনিয়নের সবগুলো পানিতে কমবেশি প্লাবিত। তবে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত সমিতির হাট ও চন্দরপুর ইউনিয়নে।

সমিতিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুণুর রশিদ ইমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ট্রলার নিয়ে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছি।”

উত্তর চট্টগ্রামের আরেক উপজেলা হাটহাজারীর ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে গুমানমর্দন, নাঙলমোড়া, ছিপাতলি, মেখল, গড়দুয়ারা, উত্তর মাদার্শা ও দক্ষিণ মাদার্শা এবং ফরহাদাবাদ (আংশিক) ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাহাড়ি ঢলে এসব ইউনিয়নের মূল সড়ক ডুবে গেছে। হালদার পানি এলাকাগুলোর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

“ত্রাণ বিতরণের জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মনাই ত্রিপুরা পাড়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে ১৫টি পরিবারকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।”

কর্ণফুলী তীরের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পানি কবলিত তিনশ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসে তাদের খাবার দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও মো. মাসুদুর রহমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টি হচ্ছে, পানি জমছে আবার নেমে যাচ্ছে। এখানে স্বর্নিভর রাঙ্গুনিয়া, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ও ইছাখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। যেসব এলাকায় পানি উঠছে সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানদের তদারক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”

পটিয়ার ইউএনও হাবিবুল হাসান জানান, উপজেলায় ছনহরা, আশিয়া ও শোভনদণ্ডী ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত।

“প্রশাসনের পক্ষ থেকে আড়াইশ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ মেট্রিক টন চাল দুর্গতদের বিতরণের জন্য মজুদ আছে।”

চন্দনাইশ উপজেলার বৈলতলী এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে শুক্রবার বিকালে পানি উঠে যায়।

দক্ষিণের কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা, ঝুলধা এলাকার কিছু এলাকা কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হলেও বড় কোন দুর্যোগ নেই বলে জানালেন ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরিজ।

তিনি বলেন, কিছু ধানি জমি প্লাবিত হলেও সেখানে ধানের চারা রোপন হয়নি।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন রায়পুর, জুঁইদণ্ডী, বারখাইন ও হাইলধর এলাকার লোকজন পানি কবলিত। টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও এখনো সেখানকার লোকজনকে সরিয়ে আনার মতো পরিস্থিতি হয়নি।

বোয়ালখালীর ইউএনও একরামুল সিদ্দিকী জানান, তার এলাকার চরণদ্বীপ ও শ্রীপুর খরণদ্বীপে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেককেই সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

মিরসরাইয়ে দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন।

তিনি জানান, উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ইছাখালী ইউনিয়নের কিছু এলাকা ও পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশ প্লাবিত হয়। ওইসব এলাকার ইতোমধ্যে ১০টন চাল এবং দুইশ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।