সোমবার শুরু হওয়া যানজট বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরমুখী সড়ক ও পতেঙ্গামুখী সড়কের যানজট কাঠগড়, সিমেন্ট ক্রসিং, ইপিজেড মোড়, কাস্টমস মোড়, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং, বাদামতলি মোড় হয়ে জিইসি মোড় পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে।
সড়কের বিপরীত অংশে যানজট না থাকলেও যানবাহনের সংখ্যা হাতে গোনা। যাত্রীরা মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিমানবন্দর এবং পতেঙ্গামুখী সড়কে যানজট শুরু হয়। বারিক বিল্ডিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারের বেশি সড়ক জুড়ে যানজট দীর্ঘায়িত হতে থাকে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাদামতলি মোড় পর্যন্ত স্থবির হয়ে যায়। বেলা দেড়টার দিকে যানজট ছড়িয়ে পড়ে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত। এরপর আরও দীর্ঘ হতে থাকে। বন্দরমুখী পোর্ট কানেকটিং সড়ক ও ডিটি রোডেও যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অতি ভারি বর্ষণ। ফলে বন্দর বাসিন্দাদের ভোগান্তি সীমা ছাড়িয়েছে।
বিমানবন্দর সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেট পর্যন্ত এলাকায় সোমবার পানি জমে যায়। রুবি সিমেন্ট কারখানার ভেতরের খালটি পরিষ্কার না করায় এই এলাকার পানি নামছে না। সঙ্গে যোগ হয়েছে ওই এলাকায় দুই মাস আগে শুরু হওয়া নালা নির্মাণকাজের ঝক্কি।
সড়ক ঘেঁষা দুই পাশের নালার উচ্চতা মূল সড়ক থেকে তিন ফুট বেশি। বুধবার থেকে পাম্প বসিয়ে সড়কের ওই অংশের পানি অপসারণের চেষ্টা চলছে। এতে বুধবার রাতে পানি কিছুটা কমেছিল। বৃহস্পতিবার ভোরের বৃষ্টিতে তা আরও বেড়ে গেছে।
ফলে ওই সড়কে বড় যানবাহন ছাড়া কিছু চলছে না। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকার ছিল জলাবদ্ধতা।
৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যান্য সময় রুবি সিমেন্ট কারখানার ভেতরের খালটি সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করে। এবার সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে। তাই আমরা পরিষ্কার করিনি।
এদিকে বিমানবন্দর যেতে পতেঙ্গামুখী বিকল্প সড়কটির নারিকেল তলা এলাকায় চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ। সেখানে বিশাল বিশাল গর্তে পড়ে আটকে যাচ্ছে কন্টেইনারবাহী বড় ট্রলি এবং ট্রাক।
কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সকে (ম্যাক্স রেঙ্কিন জেভি) বলার পর তারা সড়কের গর্তে কিছু ইট ফেলেছে। কিন্তু বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় গর্তের আকার আরও বেড়েছে। গর্তে পড়ে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। যানজট বাড়ছে।
“খুব করুণ অবস্থায় আমাদের এলাকার মানুষ দিনযাপন করছে।”
বন্দরমুখী ট্রাকের সারি
বিমানবন্দর সড়কেই চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (সিইপিজেড), কর্ণফুলী ইপিজেড, বেসরকারি বেশ কয়েকটি অফডক, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস ভবন অবস্থিত।
এসব স্থাপনা থেকে বের হওয়া পণ্যবাহী ও খালি গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে সড়কের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড অংশে। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত অংশে চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি প্রবেশ পথ। বন্দরের এসব গেটে প্রবেশের জন্য শত শত গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
বন্দরের দুই ও তিন নম্বর গেট এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে হাতেগোনা কয়েকটি গাড়ি চলচাচল করতে দেখা গেছে। ততক্ষণে অপেক্ষমান ট্রাকের সারি বারিক বিল্ডিং মোড় ছাড়িয়ে রশিদ বিল্ডিং পর্যন্ত পৌঁছেছে।
“সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং সড়ক আজকে কিছুটা ফাঁকা। তবে সল্টগোলা ক্রসিংয়ের আগের অংশে জ্যাম আছে।”
সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) মোশারফ হোসেন বলেন, “আজকের জ্যামটা বন্দরকেন্দ্রিক। বন্দরের গেইট বন্ধ থাকায় কোনো গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না।”
তবে গেট বন্ধ থাকার কথা অস্বীকার করে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে যানজট হয়েছে। বন্দরে গাড়ি ঢুকতে কোনো সমস্যা নেই।
“বৃষ্টির কারণে বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস বিঘ্নিত হলেও বন্দরের জেটিতে কন্টেইনার ওঠানামা নির্বিঘ্নে চলছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, বন্দর ঘিরে খালি ও পণ্যবাহী অপেক্ষমাণ গাড়ির সারি দীর্ঘ হচ্ছে। সড়ক স্বাভাবিক না হলে সেটা আরও বাড়বে।
হাঁটাই ভরসা
যানজট দীর্ঘায়িত হওয়ায় নগরীর বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দরমুখী ১০ নম্বর রুটের বেশিরভাগ গাড়ি চলছে বাদামতলি মোড় পর্যন্ত। একই অবস্থা এই সড়কে চলাচলকারী ৬ ও ৭ নম্বর রুটের বাস, সব ধরণের হিউম্যান হলার এবং অন্য গণপরিবহনের।
এসব গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় বিপরীতমুখী সড়কটিতে যানজট কম থাকলেও গণপরিবহন হাতে গোনা।
এই পথের যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, “সিমেন্ট ক্রসিং থেকে ইপিজেড মোড় পর্যন্ত ৪০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে এসেছি। এরপর বাসে করে কাস্টমস মোড় এসে দেখি গাড়ি চলছেই না।
“হেঁটে নিমতলা মোড়ে এসে রিকশায় ফকিরহাটের ভেতর দিয়ে আগ্রাবাদ মোড়ে আসি ৬০ টাকা ভাড়ায়। তারপর বাসে বিআরটিসি। প্রতিদিন ২০ টাকা ভাড়ায় আসি, আজ লাগল ১১০ টাকা। সময় লাগল তিন ঘণ্টা।”
দুপুরে বাদামতলি মোড় থেকে কাস্টমস মোড়ে যাচ্ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার।
তিনি বলেন, “সব গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই হেঁটেই যাচ্ছি। গত দুইদিনও হেঁটেই ফিরতে হয়েছে।”
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।