সোমবার সকালের মুষলধারে বৃষ্টিতে অনেক সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলমান এই পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন হজ যাত্রীরাও।
৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের পথে যানজটে ৪ ঘণ্টা আটকে থেকে বিমান ধরতে না পারার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ১০টায় রিজেন্ট এয়ারে আমার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। যানজটের কথা চিন্তা করে লালখান বাজারের বাসা থেকে সকাল ৭টায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা করি।
বিমান ছেড়ে যাওয়ায় অর্ধেক পথ থেকে বাসায় ফিরে যান হাসান ফেরদৌস।
যানজটের এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কালের কণ্ঠের চট্টগ্রাম ব্যুরোর প্রতিবেদক রাশেদুল তুষারকেও।
বাসা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ৪০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সকাল সোয়া ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের ঢাকাগামী ফ্লাইট ধরতে হালিশহরের এ ব্লকের বাসা থেকে বের হই সকাল সাড়ে ৭টায়।
চট্টগ্রামে গত শনিবার থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও রোববার একটু বাড়ার পর সোমবার সকালে শুরু হয় মুষলধারে বর্ষণ।
বিকাল থেকে বিভিন্ন স্থানের পানি সরে গেলেও সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেইট পর্যন্ত সড়কের পানি গত কয়েক ঘণ্টাতেও নামেনি।
সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেইট পর্যন্ত সড়কে পানি ও আর কাঠগড় সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য রাস্তা বন্ধ করে কাজ ও খোড়াখুঁড়ির কারণে মূলত এ দুর্ভোগের সৃষ্টি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) তারেক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেইট পর্যন্ত সড়কে বৃষ্টিতে কোমর সমান পানি জমে গেছে। গতকাল (সোমবার) সকাল থেকে ওই সড়কে পানি জমে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কাঠগড় সড়ক দিয়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে।”
“ফলে ওই সড়কে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে সাবধানে পার করতে গিয়ে যানজট আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
জলজটে পড়ে কাঠগড় সড়কের যানজট গিয়ে ঠেকেছে প্রায় ১০ কিলোমিটার আগে বারিক বিল্ডিং মোড়ে।
এই সড়কের পরিস্থিতি তুলে ধরে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) মোশারফ হোসেন বলেন, “পানির কারণে সকাল থেকে অন্তত ১০টি গাড়ি গর্তে পড়ে বিকল হয়ে গেছে। এসব গাড়ি রেকার দিয়ে টেনে সচল করতে সময় লাগছে। ফলে যানজট বাড়ছে।”
রাস্তায় যানজটের কারণে যাত্রীদের বিমান ধরতে না পারার কথা জানিয়েছেন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার ই আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানবন্দরে পৌঁছাতে বিলম্ব করায় বেলা ২টা ১০ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কলকাতামুখী একটি ফ্লাইটের বেশকিছু যাত্রী বিমান ধরতে পারেনি।”
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ৯টি ফ্লাইট এসেছিল। বিকালে একটি হজ ফ্লাইটসহ ৪টি আন্তর্জাতিক ও ১১টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট যাওয়া-আসার কথা ছিল।
এদিকে হজযাত্রীদের বহনকারী গাড়িগুলোকে উল্টোপথে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার তারেক আহমেদ।
সস্ত্রীক হজে যাচ্ছেন রিজেন্ট টেক্সটাইল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনোয়ার সাদত সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর মেহেদীবাগের বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়ে পৌঁছেন বেলা দেড়টায়।
“বেলা একটার দিকে আমি বন্দরটিলা পৌঁছানোর পর ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা আমাদের গাড়িটি উল্টোপথে বিমানবন্দরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলে আমরা দেড়টায় বিমানবন্দরে পৌঁছেছি। না হলে সঠিক সময়ে পৌঁছানো যেত না।”
বিমানবন্দর সড়কে এ বেহাল দশার জন্য ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স’র অবহেলাকে দায়ী করেছেন।
ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মোশারফ বলেন, “রাস্তায় কাটায় বিভিন্ন স্থানে গর্ত ভরাটের জন্য ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো সহায়তা করছে না। বারবার তাদের আমরা ফোন করছি। কিন্তু তারা আমাদের ফোন ধরছে না।”
তারা বলছে, রাস্তার যানজটের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দায়ী নয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য যানজট হচ্ছে না। এটি নির্মাণের জন্য সড়কের মাঝখানে দেওয়া ফেঞ্চিংয়ের (বেড়া) বাইরে কোনো কাজ নেই।
“ওই এলাকার (সিমেন্ট ক্রসিং-কাঠগড় সড়ক) সড়কের দুদিকে কমপক্ষে ২৪ ফুট করে রাস্তা যান চলাচলের জন্য রাখা আছে। বৃষ্টিতে হয়ত কিছু জায়গায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। সীমিত জায়গায় গাড়ির ধীরগতির কারণে রাস্তায় জ্যাম হতে পারে।”
টানা বৃষ্টিতে সড়কে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে প্রকৌশলী মাহফুজ বলেন, “গর্ত ঠিক করা গেলে সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। চট্টগ্রামের বিমানবন্দরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি ফ্রি রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”