চট্টগ্রামে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদ

চট্টগ্রামের ইংরেজির অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছনা মানুষের বাকস্বাধীনতা ও উচ্চশিক্ষার পথে হামলা বলে মন্তব্য করেছেন একটি প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তারা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2019, 06:22 PM
Updated : 6 July 2019, 07:03 PM

শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে অধ্যাপকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ‘সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে তারা এ অভিমত দেন।

বক্তারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার বিচার না হওয়ার কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসি’র একদল উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী এই ‘অপকর্ম’ ঘটানোর সাহস পেয়েছে।

টানা বর্ষণ উপেক্ষা করে হওয়া এ কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিকের সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে একুশে পদক বিজয়ী সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের ওপর হামলা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর, বাক স্বাধীনতার ওপর, উচ্চ শিক্ষার পথে হামলা।

“বাংলাদেশ বর্তমানে এমন এক অবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে যেখানে জ্ঞান চর্চা ও মুক্তবুদ্ধির আন্দোলন পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের সৃজনশীল কাজকে পশ্চাৎপদ মতবাদের নামে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”

আবুল মোমেন বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় জ্ঞান চর্চা করতে গিয়ে অনেক জ্ঞানী ও মেধাবী লোকজন অন্ধকারের শক্তির হাতে প্রাণও হারিয়েছেন। কিন্তু অধ্যাপক মাসুদের ওপর হামলা শুধু অন্ধকারের শক্তির হামলা নয়, এর পেছনে স্বার্থবাদী রাজনীতির ইন্ধনও থাকতে পারে।”

প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার সমাবেশে বলেন, “অধ্যাপকের ওপর হামলা নিছকই হামলা নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন অপরাধে বিচার না হওয়ায়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় দুর্বৃত্তরা প্রশ্রয় পায় তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে।”

ন্যক্কারজনক এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল মনসুর বলেন, “আমরা এমন এক সমাজের দিকে এগোচ্ছি তা ভাবার মতো পর্যায়ে নেই। অধ্যাপক মাসুদ একজন জ্ঞানী ব্যক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। তারপরও শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনার জন্য ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারবে না।

“অধ্যাপক মাসুদের মতো জ্ঞানী শিক্ষক যখন লাঞ্ছনার শিকার হন শিক্ষার্থী কর্তৃক তখন সমাজে পচন ধরেছে বলে মনে করতে হবে।”

আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, নারীনেত্রী নুরজাহান খান, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, কবি কামরুল ইসলাম বাদল, নাট্যকর্মী শুভ্রা বিশ্বাস, কবি সেলিনা শেলী, খেলাঘরকর্মী রুবেল দাশ প্রিন্স, আবৃত্তিশিল্পী দেবাশীষ রুদ্র প্রমুখ বক্তব্য দেন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষ থেকে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে কয়েকজন শিক্ষার্থী বের করে নিয়ে আসে। পরে তাকে লাঞ্ছিত করা হয় এবং গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া হয়।

মাসুদ মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর ইউএসটিসিতে ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন বছরখানেক আগে। এ ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর বুধবার তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

ইউএসটিসিতে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত দুই মাস আগে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তাদের অভিযোগ ছিল, ইংরেজি সাহিত্য পড়াতে গিয়ে তিনি নারী-পুরুষের সম্পর্ক, পোশাক ও জীবনাচরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যা ‘যৌন হয়রানিমূলক’।

তখনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক একদল শিক্ষার্থী মাসুদ মাহমুদের পক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে কর্মসূচি পালন করেছিলেন।

ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করেছিল, ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকায় ২০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি না পেয়ে অধ্যাপক মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে।