শিক্ষক লাঞ্ছনা: জড়িতদের শনাক্তে মাঠে পুলিশ

চট্টগ্রামের বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাং- ইউএসটিসিতে শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢালার ঘটনায় নেপথ্যে কারা জড়িত, তা শনাক্তে কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 July 2019, 11:10 AM
Updated : 4 July 2019, 11:10 AM

এদিকে ইউএসটিসির ঘটনায় ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ চিহ্নিত করতে পুলিশ কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুবর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন নওফেল নিজেই।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুবর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জোরালো অবস্থানে আছি। এর পেছনে কারা, আমরা খুঁজে বের করছি। মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। একজন শিক্ষকের সাথে এ ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।”

শিক্ষা উপমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, “আমরা যে অ্যাকশন নিয়েছি তাতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এর নেপথ্যে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।”

গত মঙ্গলবার দুপুরে ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষ থেকে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে কয়েকজন শিক্ষার্থী বের করে নিয়ে আসে। পরে তাকে লাঞ্চিত করা হয় এবং গায়ে কেরোসিন ঢালা হয়।

মাসুদ মাহমুদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর ইউএসটিতে ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন বছর খানেক আগে।

এ ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর বুধবার তাকে দুইদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

যেভাবে ঘটনার শুরু

ইউএসটিসিতে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত দুই মাস আগে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির ইংরেজি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।

তাদের অভিযোগ ছিল, ইংরেজি সাহিত্য পড়াতে গিয়ে তিনি নারী-পুরুষের সম্পর্ক, পোশাক ও জীবনাচরণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যা ‘যৌন হয়রানিমূলক’। বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে করা তার মন্তব্য ‘অসম্মানজনক’ বলেও ছাত্রদের অভিযোগ।

তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক একদল শিক্ষার্থী মাসুদ মাহমুদের পক্ষে চট্টগ্রাম নগরীতে কর্মসূচিও পালন করেছিল।

ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করেছিল, ক্লাসে উপস্থিতির হার কম থাকায় ২০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি না পেয়ে অধ্যাপক মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানান, ওই আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল মূলত মাসুদ মাহমুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি এবং কয়েকজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা।

২৫ এপ্রিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষক মাসুদ মাহমুদের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দেয়। সেদিন বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশ কমিশনারকে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছিলেন উপমন্ত্রী।

২৮ এপ্রিল এ ঘটনার তদন্তে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুলিশের সে তদন্ত শেষ হয়নি।

এরপর সেই আন্দোলন স্থিমিত হলেও মঙ্গলবার আবারও আন্দোলনে নামেন পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার পর তার পদত্যাগের দাবিতে সেদিন সড়ক অবরোধও করে।

২৫ এপ্রিলের ঘটনা বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “সেদিন আমি বাড়িতে (চশমা হিল) ঢুকছিলাম। এসময় দেখি কয়েকজন ছাত্রী ভীষণ কান্নাকাটি করছে এবং সাথে থাকা ছাত্ররা উত্তেজিত ছিল। দুয়েকজন ছাত্রী আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকিও দেন।

“ওই ছাত্রীরা সেক্সুয়াল হেরাসমেন্টের অভিযোগ করেছিলেন। তখন নুসরাতের ঘটনা ঘটেছিল। অভিযোগ গুরুতর ফৌজদারি বিষয় হওয়ায় তদন্ত করতে পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম। সে তদন্তে প্রাথমিকভাবে শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পায়নি পুলিশ।”

এর দুই মাস পর এ ধরনের ঘটনা ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, “এখন মনে হচ্ছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র পূর্ব পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। মূল হোতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে।

“এর সামনে-পেছনে যারাই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা উচিত। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে তার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা তাও দেখা দরকার। আমাদের দলের বা সংগঠনের নাম কেউ ব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছি।”