চট্টগ্রামে আ. লীগের সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার ১৭

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ; গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জনকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2019, 02:44 PM
Updated : 30 June 2019, 02:44 PM

খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খুলশী থানার এসআই মো. নোমান বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শনিবার সংঘর্ষের পর থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত লালখান বাজার ও আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে খুলশী থানা পুলিশ ও নগর গোয়েন্দা পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আদালতের মাধ্যমে রোববার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আহমেদুল হাসান জুয়েল (৩৫), সাইদুল ইসলাম (২৯), মাহমুদুল হাসান (২৪), সৃজন দাশ (৪০), নুরুল আবছার (৩২), আব্দুল মান্নান (২৪), জাহিদুর রহমান (২১), মো. সোহাগ (২৪), আলী হোসেন (২৩), ফায়সাল আহম্মদ (২১), মো. জুয়েল (২০), মো. হৃদয় (১৮), মো. ইব্রাহীম (৬২), মো. সাজ্জাদ (২৪), আবু দাউদ রাজু (২৬), মো. আনিস (২৪), মো. সোহেল (২৯)।

এদিকে সংঘর্ষের পর থানা পুলিশের পাশাপাশি নগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য তৌহিদ আজিজসহ (৪২) পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মীর্জা সায়েম মাহমুদ।

তৌহিদ আজিজ ছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আহমেদুল হাসান জুয়েল, সাইদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান ও সৃজন দাশকে সংঘর্ষের মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান ওসি প্রণব।

তিনি বলেন, “সাইদুল ইসলাম নামে এক যুবক ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার ঘটনায় এজাহার নামীয় আসামি তৌহিদ আজিজ। তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”  

গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও যুবলীগ নেতা আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারীদের পাশাপাশি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউন্সিলর এফ কবির মানিকের অনুসারীরাও রয়েছে। 

স্থানীয়দের ভাষ্য, শুক্রবার রাতে সাইদুল ইসলাম নামে আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারী এক যুবককে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে শনিবার বিকালে লালখান বাজারে সমাবেশ ডাকে আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারী নেতাকর্মীরা।

বেলালের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে লালখান বাজারের ভেতরে অবস্থান নেয় দিদারুল আলম মাসুমের অনুসারীরা। বেলালের অনুসারীরা মিছিল নিয়ে লালখান বাজারের কাঁচা বাজারের সামনে গেলে দুইপক্ষে সংঘর্ষে জড়ায়।

সংঘর্ষে দুইপক্ষের অন্তত ১০জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধসহ চারজনকে ভর্তি করানো হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। 

সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া মামলায় বলা হয়, দিদারুল আলম মাসুম ও আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারীদের চলমান বিরোধকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।

তবে মামলায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ারা মাসুম ও বেলালের অনুসারী বলে উল্লেখ করা হলেও আসামি হিসেবে এ দুজনের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।  

৯০’র দশকে চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুমের অনুসারী ছিলেন তৎকালীন কলেজ ছাত্রসংসদের এজিএস বেলাল।

বছর কয়েক আগে বেলাল লালখান বাজার এলাকায় আলাদা বলয় গড়ে তোলেন। এরপর থেকে দুইপক্ষের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সংঘাতের ঘটনা চলে আসছে। দুইপক্ষের বিবাদে এখানে হত্যাকাণ্ডও ঘটে।

নগর যুবলীগ নেতা তৌহিদ আজিজ ২০১৪ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লালখান বাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ওই সময় মাসুমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বর্তমানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ কবির মানিকের কাছে পরাজিত হয়।

পরে মানিক বেলালের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলে তৌহিদ আজিজ পক্ষ নেন মাসুমের। শনিবার সংঘর্ষে বেলালের অনুসারীদের পক্ষে মানিকের অনুসারী এবং মাসুমের পক্ষে তৌহিদ আজিজের অনুসারীরাও জড়িয়েছিলেন।