ভারতে ‘চুরি যাওয়া ফোন’ আসছে বাংলাদেশে

ভারতে চুরি হওয়া ও পুরানো মোবাইল ফোন সেট বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢুকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2019, 05:37 AM
Updated : 26 June 2019, 05:38 AM

চট্টগ্রামে ভারত থেকে আসা চোরাই মোবাইল ফোনের একটি চালান ধরা পড়ার পর এ তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত শনিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারের রয়্যাল প্লাজায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে অভিযান চালিয়ে ১৬১টি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের এসআই কামরুল হাসান কায়কোবাদ চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় (কালোবাজারি) একটি মামলা করেন সোমবার রাতে।

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মীর্জা সায়েম মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সিলেট সীমান্ত হয়ে চোরাই মোবাইল সেটের একটি চালান চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে বলে গত শনিবার খবর পান তারা।

সেই খবরের ভিত্তিতে রেয়াজউদ্দিন বাজারের রয়্যাল প্লাজায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে তারা জানতে পারেন, সিলেট থেকে আবদার কাইয়ূম নামে এক ব্যক্তির নামে দুই কার্টন মোবাইল ফোন সেট পাঠানো হয়েছে।

সায়েম জানান, কার্টন দুটি তল্লাশি করে মোট ১৬১টি ব্যবহৃত মোবাইল সেট পাওয়া যায়। এসব ফোনের কল লিস্টে পাওয়া যায় ভারতীয় নম্বর। ৫৪টি সেটের সঙ্গে প্যাকেটও ছিল।

অভিযান চলাকালে সুন্দরবন কুরিয়ারের অফিস থেকে প্রাপক আবদার কাইয়ূমকে ফোন করে মাল বুঝে নেওয়ার জন্য যেতে বলা হলেও তিনি যাননি। পরে পুলিশ ফোনগুলো জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, মোবাইল সেটগুলোর প্রাপক আবদার উদ্দিন কাইয়ূম রেয়াজ উদ্দিন বাজারের হাসিনা মার্কেটের ১ নম্বর গলির ‘কেটেল’ নামের একটি দোকানের মালিক। তার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের জমিরঘোনা এলাকায়।

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইলিয়াছ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোবাইল সেটগুলোর ডায়াল লিস্টে ভারতীয় নম্বর ছাড়াও অনেক ফোনে পাওয়া ছবি ও তথ্য থেকে বোঝা গেছে, সেগুলো এসেছে ভারত থেকে। পুরনো প্যাকেটে থাকা একটি মোবাইল সেটের সঙ্গে ভারতের জামশেদপুরের একটি দোকানের ক্যাশমেমোও পাওয়া গেছে।”

তদন্ত চলাকালে নাঈম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্যাকেটসহ ৫৬টি এবং প্যাকেট ছাড়া ১০৮টি মোবাইল ফোনের চালানের ইনভয়েসের কপি পুলিশকে পাঠান কাইয়ূম। তিনি দাবি করেন, সিলেটের বন্দর বাজারের করিম উল্লাহ মার্কেটের এক্সপার্ট টেলিকম নামের একটি দোকান থেকে কিনে ওই ফোনগুলো তিনি কুরিয়ারে চট্টগ্রামে এনেছেন।

পরিদর্শক ইলিয়াছ বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি সিলেটের করিম উল্লাহ মার্কেটে এক্সপার্ট টেলিকম নামে কোনো দোকান নেই। আর ইনভয়েসে পাঠানো মোবাইল ফোন সেটের মডেল ও আইএমইআই নম্বরের সঙ্গে জব্দ করা সেটের মিল নেই।”

পুলিশের তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সৈয়দ নিজাম উদ্দিন ও সৈয়দ আরিফ উদ্দিন নামে সিলেটের দুই ভাই চোরাই সেটগুলো সংগ্রহ করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

সিলেটের করিম উল্লাহ মার্কেটের ঠিকানা ব্যবহার করে তারা ভারতীয় চোরাই মোবাইল সেটগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে চোরাই ফোন সংগ্রহ করেও তারা ভারতে পাঠান।

এর সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিসের লোকজনও জড়িত থাকতে পারে- এমন সন্দেহ প্রকাশ করে পরিদর্শক ইলিয়াছ বলেন, “একটি কার্টন নিজামের নামে পাঠানো হলেও আরেকটি কার্টনে প্রেরকের নাম ছিল সাহল খান। তিনি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের এক কর্মচারী। গত ১৮ জুন সিলেটে সুন্দরবন ‍কুরিয়ারের মাধ্যমেই ওই চালান পাঠানো হয়।”

সাহল খান ছাড়াও চট্টগ্রামের কাইয়ূম, সিলেটের নিজাম ও আরিফকে এ মামলায় আসামি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

তবে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে সাহল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বর্তমানে ঢাকার দিলকুশা শাখায় ক্যাশিয়ার হিসেবে কর্মরত আছি। ২০১৩-২০১৫ সালের দিকে সিলেট শাখায় চাকরি করার সময় সৈয়দ আরিফ উদ্দিনের সাথে আমার পরিচয় হয়।

“গত ১৮ জুন আরিফ আমাকে ফোন করে জানায়, তিনি কিছু মাল পাঠাবেন চট্টগ্রামে। দেরি হয়ে যাওয়ায় সিলেটের বুকিং ম্যানেজার সেগুলো নিচ্ছেন না। আমি তখন বুকিং ম্যানেজারকে ফোন করে বুকিং নিতে অনুরোধ করি। বুকিং ম্যানেজার তখন প্রেরক হিসেবে আমার নাম বসিয়ে দেন।”

পরিদর্শক ইলিয়াছ বলেন, বাংলাদেশের বাজারে চোরাই সেট বিক্রি করতে হলে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করতে হয়। অনেক সময় সেগুলো পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

“কিন্তু ভারতীয় এসব সেট কম্পিউটারে রিফ্রেশ করে সহজে বাজারে বিক্রি করা যায়। পাশাপাশি বাংলাদেশে চুরি হওয়া মোবাইল সেটগুলোও ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হলে একইভাবে সেখানে বিক্রি করা যায়।”