‘এভাবে আমরাও বেশি দিন বাঁচব না’

চট্টগ্রাম নগরী থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের দোহাজারি পূর্ব জামিজুরি গ্রাম থেকে ধানের ন্যায্য দামের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছেন মৃদুল সেন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2019, 09:46 AM
Updated : 23 May 2019, 09:46 AM

সম্প্রতি তার মা মারা গেছেন; তাই পরনে উত্তরীয়-ধুতি। হাতে প্ল্যাকার্ড।

মিছিলে মৃদুলের সঙ্গী আনোয়ারা উপজেলার দুলা মিয়া। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল, মাথায় গামছা, পরনে খাটো লুঙ্গি আর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া হলদেটে ঢোলা ফতুয়া।

এতদূর থেকে এসে মৃদুল আর দুলা মিয়ারা কেন চট্টগ্রাম শহরে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির আয়োজনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন?

মৃদুল সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কিছু দিন হল আমার মা মারা গেছেন। কিন্তু এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকতে পারিনি। কারণ এভাবে আমরাও বেশি দিন বাঁচব না।”

দোহাজারির জামিজুরিতে প্রায় তিন কানি (৬০ গণ্ডা) জমির মালিক মৃদুল। ওই জমি চাষ, চারা রোপন, সেচ, সার দেয়া ও শ্রমিক দিয়ে ধান কাটিয়ে গোলায় তুলতে প্রতি কানিতে তার খরচ পড়েছে ২৪ হাজার টাকা। ওই জমির ধান এখন ফড়িয়ারা কিনতে চাইছেন ১১ থেকে ১২ হাজার টাকায়।

মৃদুল বলেন, “এক আঁড়ি (১০ কেজি) ধান উৎপাদনে খরচ ২৫০ টাকা। আর বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ বা ১২০ টাকায়। একজন দিনমজুরের বেতন দিনে ৭০০ বা ৮০০ টাকা। অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়নি। যেগুলো কাটা হয়েছে তাও গোলায় পড়ে আছে।”

দোহাজারী এলাকার পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাট এলাকাতেও অনেক জমিতে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান মৃদুল।

আনোয়ারার দুলা মিয়া জানান, তাদের এলাকায় ফড়িয়ারা প্রতি কেজি ধান ১০ থেকে ১২ টাকায় কিনছে।

“ধান বেচতে পারতেছি না। লোকের (দিনমজুর) অভাবে কাটতেও পারতেছি না। ধান কাটায়ে ঘরে তুললে বেচে যা দাম পাব তাতে কিছুই থাকবে না।”

এ বছর সরকার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা এবং প্রতি কেজি চাল ৩৫ টাকায় কেনার ঘোষণা দিয়েছে।  

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চাই গ্রাম পর্যায়ে ধান-চাল ক্রয় কেন্দ্র হোক। সরকার যে ধানের দাম এক হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে, সেই দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হোক। এবং এটা হতে হবে সব গ্রামে।”

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে কৃষক সমিতির দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি তাজুর মুল্লুক বলেন, কৃষককে তার দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে। তা না হলে কৃষকের ন্যায্য দাবি কেউ মেনে নেবে না।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতি চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার আয়োজনে এই মানববন্ধনে সমিতির দক্ষিণ জেলার সভাপতি আবদুল নবী, সাধারণ সম্পাদক পুলক দাশ, উত্তর জেলার সভাপতি কামাল সাত্তার, দক্ষিণ জেলার সহ-সম্পাদক স্বপন দত্ত বক্তব্য দেন।

এরপর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে কৃষক সমিতির নেতাকর্মী ও কৃষকরা চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান স্মারকলিপি দিতে।